Wednesday, December 4, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
Homeজাতীয়অপরাধযুবলীগ নেতা জুয়েল রানা পল্লবী-কালশীর আতঙ্ক

যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা পল্লবী-কালশীর আতঙ্ক

ইমরান খান: রাজধানীর পল্লবী, রূপনগর ও কালশী এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন জুয়েল রানা। থানা যুুবলীগ সাধারণ সম্পাদকের অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গোটা এলাকায় জুট ও মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, সরকারি জমি দখল করে বস্তি ও রিকশা গ্যারেজ বানানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি দলের নেতার নাম ভাঙিয়ে দলবলসহ অবৈধ অস্ত্র নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ান তিনি। সবশেষ বিনাকারণে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে প্রকাশ্যে মারধর ও পিস্তুল উঁচিয়ে হত্যার হুমকি দেন জুয়েল।

শুধু তাই নয়, ওই পুলিশ কর্র্মকর্তার সরকারি বডিঅন ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে পোশাক ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা হওয়ার পর পলাতক থাকলেও এবার তার রেহাই মিলবে না। এই যুবলীগ নেতাকে ধরতে সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় টানা অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ পুলিশ কর্মকর্তারা।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রমতে, মাত্র এক যুগ আগে পল্লবী-কালশী এলাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা রিকশাচালক পিতার সন্তান জুয়েল রানার বিরদ্ধে এক মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে ওই কিশোরী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এ ছাড়া বেশ কয়েক বছর আগে কালশী বিহারি পল্লীতে রহস্যজনক আগুনে পুড়ে ১১ জন মারা যাওয়ার ঘটনার মামলারও অন্যতম আসামি এই জুয়েল। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বনে যান পল্লবী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। এরপর ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলার পর ধীরে ধীরে শুরু হয় তার তাণ্ডব। স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও ঢাকা মহানগর উত্তরের এক শীর্ষ যুবলীগ প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন জুয়েল রানা।

হামলার শিকার সার্জেন্ট আল ফরহাদ মোল্লা জানান, গত রবিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে দায়িত্ব পালনকালে পল্লবী থানাধীন কালশী পুলিশ বক্সের অদূরেই মূল সড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস বিকল হয়। এতে রাস্তায় যানজট লেগে গেলে সহকর্মীদের নিয়ে বাসটি রাস্তা থেকে সড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ কাছে এসে বাসচালককে গালাগালি করেন জুয়েল রানা।

এই ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, তাকে শান্ত হতে বললে উল্টো আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন যুবলীগ নেতা জুয়েল। এ সময় তাকে মুখে মাস্ক লাগিয়ে কথা বলার অনুরোধ জানালে প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে আমাকে চড়থাপ্পড় মারতে থাকে ও প্যান্টের পকেট থেকে পিস্তল বের করে গুলি করার জন্য উদ্যত হন জুয়েল। সহকর্মী ও উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় রক্ষা পান।

ভুক্তভোগী সার্জেন্ট ফরহাদ জানান, ঘটনার পর আমি কালশী ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ফিরে আসে। ওই সময় জুয়েল রানা মোবাইলে কল দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ২৫-৩০ থেকে ৩৫ জন যুবককে ডেকে আনে। পরে পুলিশ বক্সের মধ্যেই আমার ও সহকর্মীদের ওপর দ্বিতীয় দফা হামলা চালায়। ছিনিয়ে নেয় তার বডিঅন সরকারি ক্যামেরা; ছিঁড়ে ফেলেন পরিধেয় পুলিশের পোশাক। তিনি জানান, ঊর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়ে পরের দিন সোমবার পল্লবী থানায় জুয়েল রানাসহ অজ্ঞাত ৪০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেছি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধ একটি মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জামেনা আক্তারকে (১৩) ধর্ষণের অভিযোগে পল্লবী থানায় জুয়েল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেন ওই কিশোরী। পল্লবী থানা যুবলীগ সেক্রেটারি বনে গিয়ে পল্লবী, কালশী, বাউনিয়া বাঁধ, পলাশনগর, রূপনগর, বেগুনটিলা ও লালমাটি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন জুয়েল। সরকারি খাসজমি দখল করে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রিকশা গ্যারেজ খোলেন। এ ছাড়া গোটা এলাকায় ঝুট ও মাদক কারবার এবং চাঁদাবাজিসহ যাবতীয় অপকর্মে জড়িত এই জুয়েল বাহিনী। তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এমনকি এর আগে ওই এলাকায় বাসিন্দা একজন নারী সাংবাদিক ও তার বাবাকে নাজেহাল করে ক্ষমতার দাফট দেখান এই যুবলীগ নেতা।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, পুলিশ পেটানোর ঘটনায় জড়িত জুয়েল রানাসহ অচেনা ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামি ধরা পড়বে বলে আশা করছি। তার বিরুদ্ধে ওঠা অন্যান্য অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সার্জেন্ট ফরহাদের ওপর হামলা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তাপস কুমার কুণ্ডও একই কথা বলেন। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যুুবলীগ নেতা জুয়েল রানার মোবাইলে ফোনে গতকাল সন্ধ্যায় একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments