কাজাখস্তানে চলমান সহিংস উত্তেজনায় রাশিয়ার সেনা মোতায়েন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, কেন সেখানে (রাশিয়ার) সেনা মোতায়েন করা হলো তা স্পষ্ট নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, চলমান এই বিক্ষোভ কাজাখ সরকার নিজেই সমাধান করতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে দেশটিতে তীব্র সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এতে বিক্ষোভকারী ও সরকারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর আলমাটিতে মেয়রের অফিসে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। তারা শহরের বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ অবস্থায় কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) সেনা মোতায়েন করার আহ্বান জানান। সিএসটিও হলো সাবেক সোভিয়েত ৫টি ইউরেশিয়ান প্রজাতন্ত্র এবং রাশিয়ার মধ্যে অস্থায়ী একটি সামরিক জোট। কাজাখ প্রেসিডেন্ট ওই আহ্বান জানানোর পর রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন প্রায় ২৫০০ সেনা সদস্য কাজাখস্তানে পৌঁছেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন এ নিয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসের একটি শিক্ষা হলো, যদি রাশিয়ানরা আপনার ঘরে (দেশে) প্রবেশ করে, তাহলে তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া খুবই কঠিন। তার ভাষায়, আমি মনে করি আইন শৃংখলা বজায় রেখে প্রতিবাদী জনতার সঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কাজাখ কর্তৃপক্ষ ও সরকার সমস্যার সমাধান করতে পারতো। কিন্তু কেন বাইরের সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন হলো তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে আমরা আরো জানার চেষ্টা করছি।
রাশিয়ার কিছু প্যারাট্রুপারও এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে কাজাখস্তানে। শুক্রবার বিমানবন্দরকে বিক্ষোভকারীদের দখলমুক্ত করতে কাজাখ বাহিনীকে তারা সহায়তা করেছে। অন্যদিকে আলমাটি শহরের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে কাজাখ সেনারা। এর আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় মিডিয়ায় ভিডিও প্রকাশ হয়। তাতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি করছে সেনারা।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ পর্যন্ত বিক্ষোভে কমপক্ষে ২৬ জন ‘সশস্ত্র অপরাধী’ এবং ১৮ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছেন। এই বিক্ষোভের জন্য বিদেশী সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ।
উল্লেখ্য, রোববার তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম দ্বিগুন বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ দেখা দেয় দেশটিতে। কারণ, সেখানকার বেশির ভাগ মানুষ এলপিজি ব্যবহার করেন তাদের গাড়িতে। বিক্ষোভ শুরুর পর সরকার বলে আসছে, ৬ মাসের মধ্যে এই দাম কমানো হবে। কিন্তু সরকারের এ ঘোষণায় প্রশমিত হয়নি বিক্ষোভ। পক্ষান্তরে তা আরো বিস্তৃত হয়। আরো রাজনৈতিক প্রাণহানিতে পরিণত হয়।
দেশটিতে কার্যকর কোনো রাজনৈতিক বিরোধী দল নেই। এতে ক্ষমতাসীন দল শতভাগ ভোটারের প্রায় পুরো ভোট পায়। এর আগে সেখানে প্রেসিডেন্ট ছিলেন নুর সুলতান নাজারবায়েভ। তিনি ২৯ বছর শাসন করেছেন দেশ। তারপর ক্ষমতা ছেড়ে গেলেও তার হাতে আছে উল্লেখ করার মতো ক্ষমতা। বর্তমানে দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক কাউন্সিলের প্রধানের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট তোকায়েভ।