চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হলেও মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানায় এ ঘটনায় শিমুর স্বামী নোবেলই জড়িত। পুলিশ জানায়, শিমু হত্যাকাণ্ডের তদন্তের শুরুতেই একটি প্লাস্টিকের দড়ির সূত্র ধরে রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। নিশ্চিত হওয়ার পরই শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮) ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭) গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তের সঙ্গে জড়িত পুলিশের একটি সূত্র জানায়, শিমুর লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে তার পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। একইসঙ্গে অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়েও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে।
সূত্রমতে, বাসায় তল্লাশির এক পর্যায়ে শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে এক বান্ডেল দড়ি পাওয়া যায়। লাশ গুম করতে বস্তা দুটি যে প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল সেই দড়ির সঙ্গে এর মিল রয়েছে। গাড়িটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করা ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। ফলে পুলিশের সন্দেহ জোরদার হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিমুর স্বামী নোবেলকে আটক করা হয়।
এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ শিমুকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী পুলিশকে জানান, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি শিমুকে হত্যা করেছেন। ১৬ জানুয়ারি (রোববার) সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ দুটি পাটের বস্তায় ভরেন। এরপর প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে বস্তা দুটি সেলাই করেন। তারপর তারা বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নোবেলের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ গাড়ি নিয়ে মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের দিকে যান। সেখানে রাত সাড়ে নয়টার দিকে কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোঁপের ভেতর লাশটি ফেলে দেন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। লাশ গুমের সহযোগিতার জন্য বন্ধু ফরহাদকে ডেকেছিলেন তিনি। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে নোবেল ও ফরহাদকে আদালতে নিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তাদের দুই জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শিমু ১৯৯৮ সালে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত বড় পর্দায় দেখা গেছে তাকে। প্রথম সারির অনেক পরিচালকদের সিনেমায় অভিনয় করেন শিমু। গত কয়েক বছর ধরে তিনি নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে শিমু রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। সিনেমার পাশাপাশি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন শিমু। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছেন তিনি। ২৩টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন শিমু। ৫০টিরও বেশি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেছেন তিনি।
রোববার তিনি হঠাৎ নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ঘটনায় তার স্বামী নিজেই কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন। পরদিন সোমবার কেরানীগঞ্জ থেকে শিমুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।