নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ঘুসের টাকা নিয়ে উপজেলা আনসার-ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শারমিন আখতার ও সুজন নামের এক আনসার সদস্যের মধ্যে বাক্য-বিনিময়ের এক অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া রেকর্ডটি একটি অনলাইন পোর্টালেও আপ করা হয়। তবে রেকর্ডটি গত ১৬ জানুয়ারির বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
ওই রেকর্ডটির ফোনালাপে প্রথমে একজন ব্যক্তি সুজন নামের একজনকে মোবাইলে ফোন করে আনসার ভিডিপি অফিসে ডিউটির জন্য টাকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চান। সুজন টাকা দিয়েও ডিউটি হয়নি এবং ডিউটি না হওয়ার পর সেই টাকা ফেরত পাননি বলে তিনি বিষয়টি তাকে জানান। এরপর সুজন তার পাশ থেকে অপর প্রান্তের ব্যক্তিকে বলেন- অসীম ভাই? এরপর অসীম জানতে চান কার কাছে টাকা দিয়েছেন? সুজন বলেন ম্যাডামকে টাকা দিয়েছি।
এরপর ফোনেই সুজনের সঙ্গে ওই কর্মকর্তা শারমিন আখতার কথা বলা শুরু করেন এবং বারবার জানতে চান কার কাছে টাকা দিয়েছেন। তাছাড়াও কত টাকা কত তারিখে দিয়েছেন এবং তার কোনো প্রমাণ সুজনের কাছে আছে কিনা।এরপর বৃহস্পতিবার এক হাজার টাকা দিয়েছেন এবং সেই প্রমাণ সুজনের কাছে আছে জানানোর পর উত্তেজিত হয়ে কর্মকর্তা শারমিন আখতার আনসার সদস্য সুজনকে গালিগালাজ শুরু করেন।
প্রকাশযোগ্য নয় এমন গালিগালাজ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাস না? তিনি বলেন, চাকরি করে খাই বলে মাথা বেঁচি খাইয়া নিচি বাগাতিপাড়ার? বাগাতিপাড়ার বুকে জোর দিয়ে বলতে পারবো কোনো … কাছ থেকে কোনো টাকা নিই নাই। একপর্যায়ে কর্মকর্তা বলেন, ‘তোর পা বাইড়ি ভাংগি দিব কিন্তু। তুই এক্ষুনই আয় আমার অফিসে’।
সুজন এ সময় বলেন, ‘পরে আপনার কাছে দেখা করতে যাবো ম্যাডাম’।
এরপর আবারো ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘… তুই মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাস না? তুই এখন আয় তোর বুকের পাটার জোর থাকলে’।
পরে সুজন বলেন, মিথ্যা কথা বলিনি ম্যাডাম।
কর্মকর্তা বলেন, ‘এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত সবগুলো ফেলে দিবো আমার নামে একটা মিথ্যা কথা বললে। তুই যদি আমার হাতে সরাসরি টাকা দিসিছ- এই প্রমাণ তুই দিতে না পারিস তাহলে তোকে নাকে খত দিয়ে বের করবো কিন্তু।’
পরে তিনি সুজনের কাছে জানতে চান কোন ইউনিয়নে বাড়ি। কিন্তু ওই আনসার সদস্য সুজন তার বাড়ির কথা জানাতে চাননি।
বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বাগাতিপাড়া পৌর নির্বাচনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে আনসার ভিডিপির ডিউটি বণ্টন করা হয় উপজেলা আনসার-ভিডিপি অফিস থেকে। এ ডিউটিকে কেন্দ্র করেই বাগাতিপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা (প্রশিক্ষিকা) শারমিন আকতার ও উপজেলার ঠেঙ্গামারা গ্রামের আনসার সদস্য সুজনের মধ্যে বাক্য বিনিময়ের ঘটনাটি ঘটেছে।
এ বিষয়ে আনসার সদস্য সুজন বলেন, পৌর নির্বাচনে তাকে ডিউটি দেওয়ার কথা বলে কর্মকর্তা শারমিন আখতার তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা ঘুস নেন। কিন্তু ডিউটি না দেওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে কর্মকর্তা সুজনের ওপর ক্ষিপ্ত হন। ওই রেকর্ডটি পৌরসভা ভোটের দিন (১৬ জানুয়ারি) বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে এ বিষয়ে উপজেলা আনসার-ভিডিপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রশিক্ষিকা) শারমিন আখতার বলেন, নির্বাচনে ডিউটির জন্য সুজন নামের ওই সদস্য তার কাগজপত্র আমাকে দিয়েছিল। কিন্তু ১০ দিনের গ্রাম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে ডিউটি দেওয়া যায়নি। সেই কারণে তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলেছেন। তবে তার কাছ থেকে কোনো টাকা তিনি গ্রহণ করেননি বলে দৃঢ়ভাবে দাবি করেন।