বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে এখন পর্যন্ত আট দেশের অন্তত ৭৬ ব্যক্তির জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এছাড়া হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ও ইচ্ছাকৃতভাবে আর্থিক লেনদেনের বার্তা প্রদানব্যবস্থা সুইফট সিস্টেমের নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে গাফিলতি বা দায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরের এমন ১৩ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শনাক্ত করেছে তারা। তবে পুলিশ ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করেনি।
সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৫৬১ কোটি টাকা উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাউদার্ন জেলা আদালতে রিভিউ মামলার নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করছে সিআইডি। এ মামলার রায়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মতিঝিল থানার সেই রিজার্ভ চুরি মামলার অভিযোগপত্র ‘ওপরের’ নির্দেশে দেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল কোর্টের মামলার নিষ্পত্তির আগে সিআইডি মামলার অভিযোগপত্র দিলে টাকা ফেরত পেতে বেগ পোহাতে হতে পারে। ওই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর সিআইডি তাদের তদন্ত করা মামলার অভিযোগপত্র দেবে।
গত ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। এ অর্থ যায় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজাল ব্যাংকের একটি শাখায় চারটি ভুয়া হিসাবে। সেখান থেকে দ্রুত অর্থ উত্তোলন করা হয়। পরে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র দেড় কোটি ডলার পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়। এখনো ৫৬১ কোটি টাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা চলছে। ঘটনার ৩৯ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি, মানি লন্ডারিং ও সাইবার অপরাধ দমন আইনের ধারায় মামলা করা হয়। পরে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে।
সিআইডি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত ১৩ কর্মকর্তার গাফিলতি রির্জাভ চুরির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। তাদের মধ্যে তৎকালীন গভর্নর, তৎকালীন একজন নির্বাহী পরিচালক, তৎকালীন একজন মহাব্যবস্থাপক, তৎকালীন তিনজন উপপরিচালক, তৎকালীন চারজন যুগ্ম পরিচালক, তৎকালীন তিনজন উপমহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন। এদের দু’জন বর্তমানে অবসরে গেছেন আবার পদোন্নতি পেয়ে কেউ কেউ ডেপুটি গভর্নর পর্যন্ত হয়েছেন।
এ ছাড়া এ ঘটনায় বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও হংক – এই আট দেশের ৭৬ নাগরিক জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।
সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির জানান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি পাঁচ দেশ অভিযুক্ত নাগরিকদের বিষয়ে সিআইডিকে তথ্য দিয়েছে। সিআইডির তদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, একজন গভর্নর একা সিদ্ধান্ত নেন না। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক তো আমার বিরুদ্ধে মামলা করেনি।
সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, চুরির ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৫৬১ কোটি টাকা উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাউদার্ন জেলা আদালতে রিভিউ মামলার রায় হলে মতিঝিল থানায় দায়ের করা রিজার্ভ চুরির মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। এখন অভিযোগপত্র দিলে টাকা ফেরত আনতে বেগ পোহাতে হতে পারে।