কাচের তাকে সাজানো নানা নাম আর বাহারি রঙয়ের রসগোল্লা, মিষ্টি ও সন্দেশ। একেকটির স্বাদ একেক রকমের। কোনোটা ঝাল-মিষ্টি, কোনোটা অরেঞ্জ আর কোনোটা শুধুই মিষ্টি। কাঁচা মরিচ, স্ট্রোবেরি, ম্যাংগো ও অরেঞ্জ রসগোল্লাও মিলছে। কাঁচা মরিচের রসগোল্লা একটু ঝাল, একটু মিষ্টি স্বাদের। দেখতে যেমন সুন্দর, স্বাদে-গন্ধেও অতুলনীয়। খুলনার রাজ মহল ফুড কোর্টে বাহারি রঙ, স্বাদ ও ঘ্রাণের এই রসগোল্লা টানছে ভোজনরসিকদের।
রাজ মহল ফুড কোর্ট খুলনা মহানগরীর গল্লামারী ও সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। রাজ মহলের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রাজ মিঠাই। যেখানে মিলছে কাঁচা মরিচের রসগোল্লা, স্ট্রোবেরি রসগোল্লা, অরেঞ্জ রসগোল্লা, রসের রসগোল্লা, স্পঞ্জ, ক্ষির চমচম, ক্ষির স্যান্ডউইচ, চকলেট বরফি, লেমন বরফি, কাঁচা সন্দেশ, কাশমেমি লাড্ডু, কালোজাম, ড্রাই রসগোল্লা, কাজু বরফি, মালাই সরাই, জাফরান ভোগ, গোলাপ জাম, দধিসহ প্রায় ১০০ ধরনের ভিন্ন স্বাদের মিষ্টান্ন। এর মধ্যে ব্যতিক্রমী কাঁচা মচিচের আর অরেঞ্জের রসগোল্লা।
রসগোল্লা পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। কাঁচা মরিচের রসগোল্লা একটু ঝাল একটু মিষ্টি। সবুজ রঙের এই রসগোল্লার স্বাদ একটু ভিন্ন, সেটা না খেলে বোঝা দায়। অভিনব এ রসগোল্লা মুখে দিলে প্রথমে মিষ্টি তারপর ঝালের স্বাদ পাওয়া যায়। যারা কম মিষ্টির রসগোল্লা খেতে পছন্দ করেন, তারা এই ঝাল রসগোল্লার ক্রেতা। তবে নতুন ধরনের মিষ্টি হওয়ায় সব শ্রেণির ক্রেতাই এখন এই রসগোল্লা পছন্দ করছেন।
রাজ মহল ফুড কোর্টে পরিবার নিয়ে আসা নেইনা রুমানা বলেন, খুলনায় প্রথম রাজ মহলই নিয়ে আসছে এই মিষ্টিটা। এই জন্য পরিবার নিয়ে এসেছি মিষ্টিটা ট্রাই করার জন্য। টেস্ট একটু ঝাল ঝাল, মিষ্টিও আছে। একটা জিনিস ভালো লেগেছে- মিষ্টিটা অতিরিক্ত না, আবার ঝালটাও অতিরিক্ত না। দুটোই সহনীয় পর্যায়ে আছে।
তিনি বলেন, এখানে এসে অরেঞ্জ, ঝাল রসগোল্লা, সরপুরি, গুড়ের সন্দেশসহ কয়েক ধরনের মিষ্টি নিয়েছি। সবগুলোই ভালো। কাঁচা ঝালেরটা বেশি ভালো লাগছে, তবে অরেঞ্জ ফ্লেবারেরটাও ভালো। রীনা পারভীন নামে এক নারী বলেন, এখানে ঝালের মিষ্টি আছে শুনে আসছি। প্রথম খেলাম। খুব ভালো লেগেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মহিবুল হাসান বলেন, শুনেছি এখানে ঝাল এবং অরেঞ্জ ফ্লেভারের মিষ্টি বিক্রি হয়। এখানে এসে দুটো ফ্লেভারের মিষ্টি দেখেছি। রঙিন মিষ্টি। এতে কিছু আছে কিনা দেখতে এসেছি। অরেঞ্জ ফ্লেভারের রসগোল্লা তুলনামূলক আমার কাছে ভালো লেগেছে। ঝাল ফ্লেভারটাও ভালো। ভালো লাগছে যে অরেঞ্জ এবং ঝাল ফ্লেভার আছে।
ভিন্ন স্বাদের অভিনব এই রসগোল্লা তৈরির বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের এজিএম নীল খান। তিনি বলেন, কারও পরামর্শে নয়, নিজের থেকেই এই কাঁচা মরিচের রসগোল্লা তৈরি করা। মানুষ নতুন কিছু চায়। খুলনাবাসীর জন্য নতুন কিছু করতে এই আয়োজন। এই রসগোল্লাটি একেবারেই নতুন খুলনায়। আমরাই সর্বপ্রথম খুলনায় কাঁচা মরিচের রসগোল্লা প্রস্তুত করেছি।
নীল খান বলেন, গত বছরের ১০ অক্টোবর খুলনায় প্রথম ঝাল রসগোল্লা প্রস্তুত করা হয়। শুরুর দিকে চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে এই রসগোল্লার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একবার যে খেয়েছে, দ্বিতীয়বার সে চেয়েছে। দৈনিক এক হাজার কাঁচা ঝালের রসগোল্লা প্রস্তুত করা হয়। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী রসগোল্লা প্রস্তুত করার চেষ্টা করি। রাজ মিঠাইয়ের আরও ৪/৫টি শাখা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রস্তুত প্রণালীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব খামার থেকে দুধ আসে। সেই দুধ আমরা কড়াইতে জাল দেই। এক একটি কড়াইতে প্রায় দুই মণ দুধ ধরে। জাল দেওয়ার পরে ২০ কেজি করে মাপ দেই। মাপ দেওয়ার পর সেগুলো আলাদা করি। তার সঙ্গে ছানার পানি মেশাই। এরপর এটা থেকে ছানা তৈরি হয়। ছানাগুলো শুকানো হয়। এছাড়া কাঁচা ঝাল ব্লেন্ডারে মিহি করে পেস্টের মতো তৈরি করা হয়। ছানা ঠান্ডা হওয়ার পর ছানার সঙ্গে কাচা মরিচের পেস্ট ভালোভাবে মেশানো হয়। মেশানোর পর ছানার ভেতরে একটা ফ্লেভার আসে।
আসল যেই ঝালের স্বাদটা সেটা চলে যায় ছানার ভেতরে। আর অপর পাশে মিষ্টির অংশটা থাকে। এরপর ওই মরিচ মেশানো ছানা ছোট ছোট করে গোল করা হয়। এরপর চুলায় গরম চিনির শিরায় জ্বালিয়ে নিতে হয়। সফট রসগোল্লা তৈরি হওয়ার পর ঠান্ডা চিনির শিরার মধ্যে রসগোল্লা ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর একই সাইজের কাচা মরিচ মাঝখান থেকে কেটে ফালি করা হয়। সেই কাটা ঝাল চিনির শিরা মিশ্রিত রসগোল্লার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ঝালের অরিজিনাল স্বাদটা মিশে যায়। একই উপায়ে তৈরি করা হয় অরেঞ্জ রসগোল্লাও।
রাজ মহল ফুড কোর্টের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, মিষ্টিতো অনেক দিন ধরে রয়েছে। মিষ্টিতে নতুন কিছু করার চিন্তা থেকেই মরিচের রসগোল্লা তৈরি করেছি। মিষ্টিটা খুবই ভালো। মানুষ খাচ্ছেও ভালো। তৈরি করার পাশাপাশি কোয়ালিটি ধরে রাখা আমাদের উদ্দেশ্য। প্রডাক্ট আমরা যাই তৈরি করি কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দেই। মানুষ খেয়ে ভালো বলছে, চলছেও ভালো।