ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ওষুধের ক্রেতা প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজকে নানা অজুহাতে বসিয়ে রাখা হয় ফার্মেসীতে। এক পর্যায়ে ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়ে অচেতন করা হয় তাকে। তারপর পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয় ওই গৃহবধূকে। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের ওষুধের দোকান থেকে প্রবাসীর স্ত্রি শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার ৬ টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ নিয়ে গ্রেপ্তার করা হলো তিন জনকে। গ্রেপ্তারের পর তাদের স্বীকারোক্তিতে জানা গেছে চাঞ্চল্যখর তথ্য।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার শৈলা গ্রামের অনজিৎ চন্দ্র গোপ (৩৮) ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের সুয়াইর অলিপুরের অসীত গোপ (৩৬)। আজ সিআইডি জানিয়েছে, গতকাল ঢাকা ও জগন্নাথপুর থেকে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে গ্রেপ্তার করা হয় কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার শৈলা গ্রামের জিতেশ চন্দ্র গোপ (৩০)কে।
সিআইডির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা স্বীকার করেছে, শাহনাজ পারভীন জোৎস্না কিছুদিন যাবত বেশ কিছু গোপনীয় শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এই সমস্যার সমাধানের পরামর্শের জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে জিতেশের ফার্মেসীতে যান তিনি।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা কক্ষে তাকে বসিয়ে রাখা হয় দীর্ঘসময়। কাস্টমারের ভিড় কমলে তার সঙ্গে কথা ওষুধ দেয়া হবে বলে জানানো হয়। এভাবে সময়ক্ষেপণ করা হয়। রাত রাড়তে থাকলে বাসায় দ্রুত ফেরার অস্থিরতা বেড়ে শাহনাজের। এদিকে ফার্মেসীর মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ তার বন্ধু মুদি মালের দোকানদার অনজিৎ গোপ ও পাশের অরুপ ফার্মেসীর মালিক অসীত গোপ মিলে ওই নারীকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুসারে চিকিৎসার কথা বলে ঘুমের ওষুধ সেবন করালে ঘটনাস্থলেই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি। এসময় শাহনাজকে ফার্মেসীর ভেতর রেখেই জিতেশ বাহিরে তালা দিয়ে চলে যায়। আশপাশের সব দোকান বন্ধ হলে এবং রাত আরও গভীর হলে তারা পুনরায় তালাবদ্ধ ফার্মেসী খুলে প্রবেশ করে। তারা এনার্জি ড্রিংকস পান করে। তারপর ভকটিমকে জোর পূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
শাহনাজ বাধা দিয়েও পেরে উঠেননি। ধর্ষণের বিষয়টি শাহনাজ তার পরিবারের সদস্য ও অন্যান্যদের নিকট প্রকাশ করার কথা বললে, আসামিরা তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। একপর্যায়ে তারা পরস্পর যোগসাজসে শাহনাজের পরিহিত ওড়না গলায় পেঁচিয়ে এবং বিশ্রাম কক্ষে থাকা বালিশ দিয়ে মুখে চেপে ধরে তাকে হত্যা করে।
তারপর লাশটি ধারালো ছুরি দিয়ে মাথা, দুই হাত, দুই পা এবং বুক পেটসহ ছয়টি অংশে বিভক্ত করে। দোকানে থাকা ওষধের কার্টুন দিয়ে খন্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে ফার্মেসী তালা দিয়ে তারা চলে যায়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে ভিকটিম শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার লাশের খন্ডিত অংশগুলো মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই হেলাল আহমদ (৫০) বাদি হয়ে প্রথমে ফার্মেসীর মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপকে গ্রেপ্তার করে। নিহত শাহনাজ সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের নারকেলতলার প্রবাসী ছরকু মিয়ার স্ত্রী।