খালেদ মাসুদ রনি:
তরুণদের আইকন ভ্রমন কন্যা নাজমুন নাহার।বিশ্বের সর্বাধিক রাষ্ট্র ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশী পতাকাবাহী এ নারী।২১ বছরের সাধনায় তার ভ্রমনের তালিকায় এখন ১৫২ টি দেশ।তার এ দু:সাহসিক অভিযাত্রার কারণে দেশ-বিদেশে ৫০ টির উপরে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সুইডেনে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা এ নারী।গত ২৩ শে ফেব্রয়ারী ১৫২ তম দেশ রিপাবলিক অব সান মারিনো ভ্রমনের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক কৃতিত্ব অর্জন করেন নাজমুন নাহার সোহাগী।২১ বছর ধরে তিনি পৃথিবী ঘুরছেন খেয়ে না খেয়ে।তার লক্ষ্য বিশ্বের ১৯৭ টি দেশ।তিনি ঘুমালেও স্বপ্নে দেখতে পান কোন না কোন দেশে ভ্রমন করছেন।শুধু তাই নয়,বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে ১৫২ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক ছুঁয়ে বিশ্ব শান্তির বার্তা দিয়েছেন।তিনি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে দেশে বিভিন্ন জনপদের মাঝে বাংলাদশের পতাকাকে গৌরবের সাথে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন।এছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস,কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকেও তিনি বিশ্বের দরবারে তাঁর পৃথিবী অভিযাত্রার মাঝে তুলে ধরেছেন।বিশ্বের তিনিই প্রথম নারী যিনি এত দেশ ভ্রমন করেছেন।
লক্ষীপুর সদর উপজেলার গঙ্গাপুরের একটি ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নেওয়া সোহাগী ২০০০ সলে ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাঁর প্রথম বিশ্ব ভ্রমণের সূচনা হয়।৮ ভাই বোনে মধ্যে তিনি সবার ছোট।পারিবারিক নাম ছিলো সোহাগী।দাদার ভ্রমনের গল্প শুনে ও বাবার অনুপ্রেরনা থেকে তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।১ জুন ২০১৮ সালে ১০০ তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের উপর।১৫২ দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক মাইলফলক হলো নাজমুন নাহারের।তার বিশ্ব অভিযাত্রার মাঝে তিনি বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার,মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে তবুও থামেনি তার পদযাত্রা,তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছেন তার বিশ্ব অভিযাত্রার সাথে সাথে।বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি,বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী,রাষ্ট্রপ্রধান,বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাকে সংবর্ধিত করেছেন, বহু অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।নজমুন নাহার তাঁর এই বিরল কাজের জন্য তিনি পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা ‘পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।এ পর্যন্ত সারা বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে প্রায় লক্ষাধিক বাচ্চার সাথে তিনি বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
এছাড়াও পথে পথে তিনি স্কুল,কলেজ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বিশ্ব শান্তির বার্তা পৌঁছান। পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করেন তার বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে,এছাড়া বাল্য বিবাহ বন্ধের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।শিশু ও তরুণদেরকে উৎসাহিত করেন তার বিশ্বভ্রমণে অভিযাত্রার মাধ্যমে।যার ফলে এবারের(২০২২)সালে নারী দিবসে তিনি পেয়েছেন উইমেন অয়ারিয়র অ্যাওয়ার্ড,ইক্লাব অ্যাওয়ার্ড লন্ডন থেকে স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড,মিস আর্থ কুইন অ্যাওয়ার্ড,অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা,গেম চেঞ্জার অব বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড,মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল উইমেন অব বাংলাদেশ,গ্লোব অ্যাওয়ার্ড,অতীশ দীপঙ্কর গোল্ড মেডেল
সম্মাননা,জনটা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড,তিন বাংলা সম্মাননা ও রেড ক্রিসেন্ট মোটিভেশনাল অ্যাওয়ার্ড।জাম্বিয়া সরকারের গভর্নর হ্যারিয়েট কায়োনার কাছ থেকে ‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ উপাধি,সফল নারী সম্মাননা,কবি নজরুল একাডেমি থেকে বিদ্রেহী অ্যাওয়ার্ড লক্ষ্মী তারুণ্য সম্মাননাসহ দেশে-বিদেশে মোট পঞ্চাশটির মতো সম্মাননা পেয়েছেন।২০০৬ সালে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে তিনি বিদেশের মাটিতে পা রাখেন।নাজমুন নাহার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এছাড়া তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এশিয়া বিষয়ে পড়াশোনা করেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে।২১ বছর তিনি পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে চলেছেন বাংলাদেশের পতাকাকে বিশ্বদরবারে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।১৫২ দেশের মধ্যে ১৪টি দেশ ভ্রমণে সঙ্গী ছিলেন তাঁর মা।বাকি দেশগুলো তিনি একাই ভ্রমণ করেছেন।দিনের পর দিন সর্বোচ্চ টানা ৫৮ ঘণ্টা,কখনো ৪৮ ঘণ্টা,কখনো ৩৬ ঘণ্টা তাঁকে বাসে জার্নি করতে হয়েছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে।টানা কখনো ১৫ দেশ, কখনো ১৪ দেশ তিনি তিন মাস,চার মাস,পাঁচ মাসের জন্য সড়কপথে এক শহর থেকে আরেক শহরে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করেছেন।তিনি সুইডেনে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করতেন।সামারে তিনি ১৭–১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে পয়সা জমাতেন শুধু ভ্রমণ করার জন্য।কম খরচে থাকতেন পৃথিবীর বিভিন্ন ট্রাভেলার্স হোস্টেলে।কখনো তাঁবু করে,কখনো কোচ সার্ফিংয়ের মাধ্যমে।স্বল্প খরচে পৃথিবী রহমান করার জন্য সড়ক পথে ভ্রমণ করতেন নাজমুন,পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে জোন ভাগ করে করে একটানা ভ্রমণ করতেন।
তিনি বলেন,আমার পরবর্তী ভ্রমন হবে উজভেকিস্থান,তাজিকিস্থান,তুরকম্যানিস্থান,শিষেল,মরিসার্স,কমরোস।তিনি বলেন,আমি মঙ্গলবার লন্ডন থেকে জার্মারি যাব এবং সেখান থেকে ভ্রমন শুরু করব।১৫২ দেশ ভ্রমন করা এ নারী বলেন,আমি কোন দেশে ভ্রমণের পূর্বে সেই মহাদেশের ম্যাপ ও সেখানকার দর্শনীয় জায়গাগুলোর উপর গবেষণা করে নেই।সেখানকার পার্শ্ববর্তী রুটগুলো দেখে কিভাবে কম খরচে সেখানে পৌঁছানো যায়।যার ফলে আমি নিজ খরছে ১৪৫ দেশ ভ্রমন করতে পেরেছি।১৪৬ তম দেশ থেকে দুটি কোম্পানি আমাকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে।
একজন ইয়ূথ ও বাংলাদেশের পতাকা হাতে পিস রানার হিসাবে এই অভিযাত্রাকে ইতিহাসের সাক্ষী করে রাখার জন্য নিজ দেশের পতাকা বহন পৃথিবীর ইতিহাসে স্থান পাচ্ছে।সারা বিশ্বে নাজমুন নাহারের দেশাত্মবোধে জাগ্রত এই অভিযাত্রা পৃথিবীর পথে পথে বিশ্বমানবতার মাঝে আমাদেরকে আরো বেশি গর্বিত করছে।যুগে যুগে পৃথিবীতে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী অনেক মানুষ এসেছেন আলোকবর্তিকা হাতে আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করতে।নাজমুন আমাদের বাংলাদেশি এ প্রজন্মের একজন আলোকবর্তিকা নক্ষত্র মানুষ।