রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে বেশিরভাগ সময় মানসম্মত স্যুট-টাই পরে হাজির হতেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যেমনটা পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা পরে থাকেন। কিন্তু রুশ আক্রমণ শুরু হতেই বদলে যায় তার পোশাক-আশাক। এখন প্রায় সবসময় একেবারে সাদামাটা একটি সবুজ টিশার্ট পরে মিডিয়ার সামনে আসতে দেখা যায় জেলেনস্কিকে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের এই পোশাক বদলের রহস্য কী? এর উত্তর দিয়েছে স্প্যানিশ জাতীয় দৈনিক মার্কা। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা টেনে এনেছে তারা।
মার্কার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ জনগণের চাপের কারণেই ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছিল। আর এই চাপ তৈরি হয়েছিল প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকদের পাঠানো যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র থেকে। তাদের কাছ থেকেই গোটা বিশ্ব জানতে পেরেছিল, ভিয়েতনাম যুদ্ধে আসলে কী ঘটছে। সেইসব ছবি একটি নির্দিষ্ট যুগ বা সংঘাতের দৃশ্যমান দলিল হয়ে রয়েছে।
আজ ইউক্রেনীয়রাও তাদের অবস্থান বুঝতে পেরেছে এবং তারা জানে, তাদের বার্তাগুলো সবাইকে বোঝাতে হবে। এর জন্য তারা সেই ‘ডেভিড গোলিয়াথের লড়াইয়ের’ গল্প গ্রহণ করেছে, যেখানে ইউক্রেন হচ্ছে ডেভিড, যে দুর্বলদের বাঁচাতে এক মহাশক্তির বিরুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ইউক্রেন বোঝাতে চায়, তাদের লড়াই ভালোর পক্ষে।
জেলেনস্কিও ভালো করেই জানেন, এমন একটি জটিল সংঘাতে জনমত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তিনি ক্রমাগত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সংলাপের জন্য আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন, যাতে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি বন্ধ করা যায়। তিনি বারবার বোঝাচ্ছেন, ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখলে পুতিনের জিদের কারণে তারা শুধুই ভুক্তভোগী, এর পেছনে তাদের কোনো দায় নেই।
জেলেনস্কি ও সবুজ টিশার্ট
ক্ষমতায় আসার আগেও জেলেনস্কি ছিলেন ক্যামেরার সামনের মানুষ। ২০১৯ সালে নির্বাচনে নামার আগে কৌতুক অভিনেতা ছিলেন তিনি। সেসময় তার নির্বাচনে জেতা নিয়ে অনেকের সন্দেহ থাকলেও আজ সেই মানুষটিই ইউক্রেনের ইতিহাসের অন্যতম কঠিন এক সময়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি এমন এক চরিত্রে রূপায়ন করছেন, যিনি আর দশজনের মতো সাধারণ মানুষ হলেও সত্যের জন্য, শান্তির জন্য, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছেন।
জেলেনস্কি সাদামাটা সবুজ টিশার্ট পরছেন মূলত তার সহযোদ্ধা, ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রতি সংহতি জানিয়ে। এই যুদ্ধ জিততে তাদের সমর্থন খুবই প্রয়োজন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের।
জেলেনস্কি খুব ভালোভাবে বোঝেন, মুখের হাজার কথার চেয়ে কখনো কখনো একটি ছবি বেশি কাজে আসে। তাই তো সাদামাটা টিশার্ট পরে জনগণের কাছে তিনি বার্তা পাঠাতে চান, আমিও আপনাদের মতো, আপনাদের সঙ্গেই আছি।