লন্ডন অফিস:ইউরোপের বড় মসজিদ ইস্ট লন্ডন মস।এই মসজিদের দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ ও মিনারগুলো সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে প্রায় ৫ বছর আগে।তাই এগুলো প্রতিস্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে।এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫ লাখ পাউন্ড।বিভিন্ন ধরনের ফান্ডরেইজিং কর্মসূচির মাধ্যমে ইতোমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করা হয়েছে।বাকি ২ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত আছে।এ লক্ষ্যে আগামী ১৬ এপ্রিল শনিবার বিকেল ৩টা থেকে ফজর পর্যন্ত চ্যানেল এস টিভিতে লাইভ ফান্ডরেইজিং অনুষ্ঠিত হবে।এতে সর্বস্তরের মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আসতে আহবান জানানো হয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সেমিনার হলে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং ও ইফতার মাহফিলে মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানান।ইস্ট লন্ডন মসজিদের ফাইন্যান্স এন্ড এনগেইজমেন্ট ডাইরেক্টর দেলওয়ার খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ড. আব্দুল হাই মুর্শেদ।বক্তব্য রাখেন মসজিদের চেয়ারম্যান আইয়ূব খান, প্রধান ইমাম শায়খ আব্দুল কাইয়ূম ও সিনিয়র ইমাম হাফিজ মাওলানা আবুল হোসাইন খান।
লিখিত বক্তব্যে ড.আব্দুল হাই মুর্শেদ বলেন, কোভিড মহামারির কারণে গত দুই বছর পুরো বিশ্ব কঠিন সময় পার করেছে।ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন মুসলিম সেন্টারও অত্যন্ত কঠিন সময় পার করে এসেছে। তবে আল্লাহ তায়ালার অশেষ করুণা।হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর মিছিল থেকে তিনি আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আর এই জন্য আজ আমরা রোজা রাখতে পারছি।তিনি বলেন, হোয়াইচ্যাপেল রোড থেকে ইস্ট লন্ডন মসজিদের যে দৃষ্টিনন্দন গম্বুজ ও মিনারগুলো দেখা যায়, প্রায় ৭ বছর আগে সেগুলো সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এগুলোর মেয়াদ ছিলো ৩০ বছর, এখন ৩৭ বছর চলছে।তাই এগুলো দ্রুত প্রতিস্থাপন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।জরুরী হওয়ার কারণ হচ্ছে,বর্তমানে মারিয়াম সেন্টারের পাশ দিয়ে ক্রেন ঢোকানোর যে জায়গা আছে সেখানে যেকোনো সময় বিলডিং নির্মাণ হয়ে যেতে পারে।যদি বিলডিং হয়ে যায় তাহলে গম্বুজ প্রতিস্থাপনের জন্য ক্রেন ঢোকানো যাবে না। এগুলো প্রতিস্থাপনে ব্যয় হবে প্রায় ৫ লাখ পাউন্ড।আগামী ১ বছরের মধ্যে গম্বুজ ও মিনারগুলো পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।এ লক্ষ্যে গত বছর থেকে ফান্ডরেইজ কার্যক্রম চলছে।
ড. আব্দুল হাই মুর্শেদ বলেন, যেসকল দাতা ১ হাজার পাউন্ড করে দান করবেন তারা চাইলে তাদের নাম গোলডেন ডোনার হিসেবে ‘‘ডোম সাপোর্টার ওয়ালে” লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারবেন। মসজিদের ওয়েবসাইটে ‘‘ডোম অ্যাপিল’’ নামে একটি পেইজ রয়েছে।এই পেইজ ভিজিট করে গম্বুজ ও মিনার পুনঃনির্মাণের জন্য ডনেশন করা যাবে।এছাড়াও আরো কিছু উন্নয়ন কাজ চলছে।মসজিদের মূল হলটি বাম দিকে সম্প্রসারনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ১ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে সম্প্রসারিত অংশের দেয়াল, ট্রাকচার ও ছাদ নির্মাণ হয়ে গেছে।এই ১ মিলিয়ন পাউন্ড দান করেছেন মসজিদের বিলডার অরিফ জাবাদানী। বাকি কাজ শেষ করতে প্রয়োজন আরো ১ মিলিয়ন পাউণ্ড।হলটি সম্প্রসারণ হয়ে গেলে অতিরিক্ত আরো ৪০০ মানুষ সেখানে জামাতে নামাজ পড়ার সুযোগ পাবেন।তাছাড়া মারিয়াম সেন্টারের মহিলা হলটিও বাম দিকে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।ইতোমধ্যে কাউন্সিল থেকে পারমিশন পাওয়া গেছে। এই সম্প্রসারণ কাজে ব্যয় হবে প্রায় ৮শ হাজার পাউন্ড। তখন অতিরিক্ত আরো ৩০০ মহিলা নামাজ পড়ার সুযোগ পাবেন।
মারিয়াম সেন্টার নির্মাণ ও সিনাগগ ভবন ক্রয় বাবদ এখনও দুই মিলিয়ন পাউন্ড ঋণ(ক্বরজে হাসানা)রয়েছে। মসজিদের নিয়মিত আয় থেকে এই ঋণ পরিশোধ চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলে মসজিদ কমিটি আশাবাদী। ঋণ পরিশোধের পর মসজিদকে স্বয়ংসম্পুর্ণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে- যাতে মসজিদের আয়ে মসজিদ চলতে পারে।প্রেস বিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, রামাদ্বানে প্রতিদিন প্রায় ৬শ মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু কোভিড লকডাউনের কারণে গত দুই রামাদ্বানে সেটা করা সম্ভব হয়নি। তবে রামাদ্বানে প্রতিদিন প্যাকেটজাত গরম খাবার গৃহহীন ও দরিদ্র মানুষকে পৌঁছে দেয়া হয়। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এনএইচএস কর্মীদের জন্য খাবার সরবরাহ করা
হয়।
এবারের রামাদ্বানে আগের মতোই প্রতিদিন ৬শ মানুষের ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে। লন্ডন মুসলিম সেন্টারের নিচতলায় আয়োজিত এই ইফতারে মাহফিলে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রতিদিন অংশগ্রহণ করে থাকেন। ৩ পাউন্ড দান করে একজন মানুষের ইফতার স্পনসর করা যায়। দানশীলদের ডনেশন থেকেই এই ইফতার কার্যক্রম চলে।ড. মুর্শেদ বলেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদ বৃটেনের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।এটি কমিউনিটির মসজিদ। আমরা কমিউনিটির পক্ষ থেকে এই মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। মসজিদটি সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে এবং মানুষ এখানে প্রশান্তিমনে ইবাদত করবে-এটাই আমাদের লক্ষ্য। কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় মসজিদটি আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে। আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য সবধরনের সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এমন একটি মসজিদ রেখে যেতে পারছি-এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।বিগত দিনের মতোই আমরা মিডিয়ার সহযোগিতা চাই।ইতিবাচক সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সাংবাদিকরা আমাদের ভালো কাজগুলো কমিউনিটির মানুষের কাছে তুলে ধরবেন বলে আমরা আশাবাদী।