দেশে মোট ৫১ লাখের বেশি নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক এ বাহন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যবহার বাড়ছে ব্যাপকভাবে। ঈদকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি মৃত্যু হয়েছে মোটরসাইকেলে।
যাত্রী অধিকার ও সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, ঈদযাত্রা ও ঈদ উদযাপনের গত ১০ দিনে সারা দেশে ৯৭ জন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫১ জনই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭ শতাংশের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সারা দেশে ১৭৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন মোট ২৪৯ জন। নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন ৯৭ জন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮.৫৯ শতাংশ।
নিহত ৫১ জনের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭ শতাংশ ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এত বেশি নিহতের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ঈদযাত্রায় গণপরিবহণের বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছে। তাই দুর্ঘটনাও বেশি হয়েছে। সংস্থাটির অপর একটি পরিসংখ্যান বলছে, গত ১ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত ১১২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন। একই সময় ৫৬ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন, যা মোট মৃত্যুর ৪০.২৮ শতাংশ।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শহর থেকে মানুষ গেছেন। এ যাত্রায় বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনের পাশাপাশি এবার ব্যাপকহারে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। যেসব মোটরসাইকেল রাজধানীতে রাইড শেয়ার করত, তারাই বাড়ি যাওয়ার সময় নিজ নিজ এলাকার যাত্রীদের নিয়ে চলে গেছেন।
মোটরসাইকেলের চাপে এবার ফেরিঘাটগুলোয় আলাদা ফেরি দিতে হয়েছিল। আর এ কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাও বেশি ছিল। মোটরসাইকেল গণপরিবহণ না, তবে গণপরিবহণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সড়কের ঝুঁকি আরো বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখন অনেকেই কোনোরকম মোটরসাইকেল চালানো শিখেই রাস্তায় যাত্রীবহন করতে নেমে পড়ছে।
এতে যাত্রী ও চালকের দুজনের ঝুঁকি বাড়ছে। ‘মানুষ বাধ্য হয়ে গণপরিবহণ হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে’ বলে মনে করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের গণপরিবহণ ব্যবস্থা নাজুক। তাই মানুষ মোটরসাইকেলকে বিকল্প হিসেবে দেখছে। এতে অনেকে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারলেও তাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, গণপরিবহণ ব্যবস্থা জনবান্ধব করলে এসব মৃত্যু থেকে মানুষকে রক্ষা করা যাবে।
নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, সড়কে মানুষ আইন মানে না। তেমনি চালকদের মধ্যে অনেকের লাইসেন্স নেই। যাদের আছে তারাও মোটরসাইকেল চালানোতে দক্ষ নন। তাই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করার নজির যেমন আছে, তেমনি অনেক দেশে এ বাহনটি অনেক বেশি চলছে, এ কথাও সত্য। যেসব দেশে বেশি চলে সেখানে আইন কঠোর। আমাদের সড়কের মতো অরাজগতা নেই। তাই সেখানে দুর্ঘটনাও কম হচ্ছে। আমি মনেকরি সবকিছু যদি আইনের কাঠামোয় এনে পরিচালনা করা যায়, তবেই সংকটের সমাধান সম্ভব হবে।