Monday, November 25, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
HomePhotographyঅনলাইনে ভাড়া হচ্ছে নারী মডেল

অনলাইনে ভাড়া হচ্ছে নারী মডেল

বিশেষ প্রতিবেদক :চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে। একদম বাসায়।মাদক থেকে নারী, যা চাইবেন তাই। অনলাইনে অর্ডার করলেই ঘন্টা হিসেবে অর্থ দিয়ে সেবা মিলছে। খোদ ঢাকা শহরেই হচ্ছে এই অনৈতিক-অপরাধমূলক বাণিজ্য। উদীয়মান মডেল থেকে শুরু করে পাওয়া যাচ্ছে পরিচিতদেরও। ঠিকানা দিলে পৌঁছে যাচ্ছে বাসায়। এমনকি ঢাকার বাইরেও সঙ্গী হিসেবে ভাড়ায় যাচ্ছেন তারা। কখনো কখনো নাটক, বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের নামে দল বেঁধে যাচ্ছেন অনেকে। সরাসরি নারী মডেল ভাড়া দিতে রয়েছে অসংখ্য সাইট। অনলাইনে এসব সাইটে সদস্য হয়ে অর্ডার করলেই মিলছে কাঙ্খিত সঙ্গী। অনলাইনে কৌশলে বিক্রি হচ্ছে মাদক।

মাদকের বিষয়টি গোপনে বা সাঙ্কেতিক ভাষার প্রকাশ হলেও সরাসরি ভাড়া হচ্ছে নারী মডেল। এরকম বিজ্ঞাপন ও ফেসবুক পেইজ অনেক। প্রায়ই ঘটা করে রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে, রিসোর্টে এসব অপরাধীরা আয়োজন করে নাচ, গানের। এসব উৎসবে মাদক সেবন থেকে শুরু করে ঘটে নানা অনৈতিক কার্যকলাপ। নিকেতন, গুলশান, বনানী ও উত্তরার বিভিন্ন আবাসিক ভবনেও আয়োজন করা হয় এসব পার্টির। কোনো কোনো স্পা সেন্টারের আড়ালেও চলছে এসব অপকর্ম। এসবের মূল প্রচারণা হচ্ছে অনলাইনে। মাঝে-মধ্যে জড়িতরা গ্রেপ্তার হলেও এই বাণিজ্য দিন-দিন বেড়েই চলছে। এর শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা।

উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৯ নম্বর সড়কের বহুতল একটি বাড়ি। এর চতুর্থ তলায় প্রায়ই আয়োজন করা হয় এরকম পার্টির। একইভাবে টঙ্গী স্টেশন রোডের একটি হোটেলে নাচ, গানের নামে আয়োজন করা হয় মাদক পার্টির। ওই হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের তৃতীয় তলায় ডান্স ফ্লোর। চারদিকে সোফা, চেয়ার। মাঝখানে সাত-আট তরুণী। স্বল্প বসনা। সোফার পাশে জোড়ায় জোড়ায় তরুণ-তরুণী নাচ করছে। কার হাতে বিয়ারের ক্যান। কারও হাতে মদের গ্লাস। সোফায় বসেও একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে উন্মাদনায় মেতে উঠেছেন অনেকে। মাঝে-মধ্যে জোড়ায় জোড়ায় উঠে যাচ্ছেন। অন্য কোথাও। ফিরছেন আধা ঘন্টা-এক ঘন্টা পরে। তখন তরুণীর চুল এলোমেলো। মুছে গেছে ঠোঁটের লিপিস্টিক।

একইভাবে খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকার ১৯ নম্বর সড়কের একটি বাসায় কণ্ঠ শিল্পী হিসেবে পরিচিত এক নারীর বাসায়ও আয়োজন করা হয় এমন পার্টির। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় এরকম হাজার-হাজার পার্টির আয়োজন করা হয়। এসব পার্টির মাধ্যমে মরণনেশার বাণিজ্য বিস্তৃত করা হয়। তবে পার্টির বাইরে প্রতিদিন মাদক বিক্রি হয় ভিন্ন কৌশলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেছে নেওয়া হয়েছে মাদকের নতুনবাজার। অনলাইন। অনলাইনে মিলছে মাদক। ইয়াবার পর মরণনেশার বাজারে এখন যুক্ত হয়েছে আইস। মাদকসেবীদের কাছে ভয়ঙ্কর এই দু’টি মাদকের বিপুল চাহিদা। মাদক প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তায় কারবারিরা ঘনঘন পাল্টাছে কৌশল। প্রকাশ্যে সাঙ্কেতিক ভাষা ব্যবহার থেকে শুরু করে, নির্দিষ্ট স্থানে বিক্রি, হোম ডেলিভারি এমনকি অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে মাদক। বিভিন্ন নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদক কারবারে জড়িত অন্তত অর্ধশত গ্রুপ রয়েছে। মূলত পরিচিতরা এসব গ্রুপের সদস্য। কোনো কোনো মাদক কারবারি নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এ্যাপসের মাধ্যমে বিক্রি করছেন মরণনেশা। এতে পরিচিত ক্রেতাদের নিয়ে গ্রুপ করছেন। বিশেষ দিন উপলক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে পার্টির আয়োজন করা হয়। এতে মাদক এবং একান্ত সঙ্গী হওয়ার জন্য এক শ্রেণির নারী থেকে শুরু করে থাকে নাচ, গানের আয়োজন।

কিছু পেইজ রয়েছে যেখানে সরাসরি ‘মডেল ভাড়া হবে’ বলে প্রচারণা চালানো হয়। ঢাকা রিয়েল সার্ভিস বিডি নামে এমন একটি পেইজে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে অনলাইনে একশ ভাগ বেস্ট কোয়ালিটি রিয়েল সার্ভিস ও ফুল সেফ্টি-সিকিউরিটি সম্পূর্ণ একমাত্র এই এজেন্সি। দীর্ঘ চার বছরে আমাদের এজেন্সি থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার ক্লাইন্ট তাদের স্থানে বা আমাদের স্থানে এসে সার্ভিস নিয়েছে। আমাদের এই চার বছরে অর্জন দুই হাজার ভেরিফাইড মেম্বার, পাঁচ শতাধিক মডেল গার্ল, পেইজ, ইনস্টাগ্রাম,বিশ্বস্ততা, সাপোর্ট ইত্যাদি। যারা সার্ভিস নিতে ইচ্ছুক। তারা এখনই এই মাসের অফারে ফি দিয়ে মেম্বারশিপ গ্রহণ করে সার্ভিস জন্য কনফার্ম করুন।’

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এসব পেইজের বিজ্ঞাপনে অগ্রিম টাকা দিয়ে অনেকে প্রতারণারও শিকার হচ্ছেন। অনলাইনে মাদক বিক্রির ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করছে কেউ কেউ। আবার কোনো গ্রুপ পরিচালনা করা হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। বিশেষ করে পাশ^বর্তী দেশ ভারত ও মালয়েশিয়া কেন্দ্রিক গ্রুপ রয়েছে বেশি। এমনকি মাদক ব্যবসায় জড়িত তরুণীরাও সেসব গ্রুপের এডমিন। নানা রকম নামে পরিচালনা করা হচ্ছে এসব গ্রুপ। ফেসবুকে এমন অনেক গ্রুপ রয়েছে।

কিছুদিন পরপর এসব গ্রুপের নামও পরিবর্তন করা হচ্ছে। আড্ডাবাজ, রিয়েল সার্ভিস, ঢাকা সার্ভিস, মডেল সার্ভিস, আমরা শান্তি চাই, রঙিন দুনিয়া, ওম শান্তি, জাস্ট এনজয়, এসো মজা করি.. এ রকম নানা নামে পরিচালিত হচ্ছে এসব গ্রুপ। মাদকের অর্ডারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে সাংকেতিক নাম। কোনো কোনো গ্রুপে সাংকেতিক নামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কোড নম্বর। ইয়াবা ও আইসের সাঙ্কেতিক নামের মধ্যে রয়েছে, আপেল,কমলা,চায়না কমলা,ইন্ডিয়ান কমলা, ট্যাবলেট, লালবাবা, দুধ, সাদা ভাত,চাইনিজ,গোলাপী,বড়ি ইত্যাদি।

ডিএনসি’র উপপরিচালক (উত্তর) রাশেদুজ্জামান বলেন, টেকনাফ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে ঢাকায় মাদক আনা হচ্ছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনসহ এসব বিষয়ে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে আমাদের। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশেই নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments