Monday, November 25, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
Homeবাংলাদেশড. ইউনুস প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন!

ড. ইউনুস প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন!

শতাধিক মামলা প্রত্যাহার ও চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যহতি নেয়ার শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ শ্রমিকের সঙ্গে ৪৩৭ কোটি টাকায় সমঝোতা করার আগে করা হয় নানা অপপ্রচার। গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে দেয়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলংকার মতো নাজুক অবস্থা হতে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার উৎখাত হয়ে, দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন গ্রামীণ টেলিকমের মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। তখন শ্রমিকদের এসব মামলা ধাপে টিকবেনা, কোনো ক্ষতিপূরণও তারা পাবে না। বিপরীতে তাদের চাকরি হারানো, জেল খাটাসহ অন্যান্য নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে।

এই ভয়ে কিছু না পাওয়ার আশঙ্কায় আত্মসাৎ করা হয় শ্রমিকদের ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এই টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তারের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সভাপতি কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচা আকরাম টাওয়ারের পাশ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ। পরে গতকাল বুধবার তাদেরকে আদালতে পাঠানো গ্রেপ্তারদের ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এরআগে, গত ২৩ মে ১১০টি মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা বাবদ ৪৩৭ কোটি টাকায় সমঝোতা করে গ্রামীণ টেলিকম। তারও আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন করা হয়। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী এবং টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান মিরপুর মডেল থানায় ২৬ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের বিষয়ে মামলা দায়ের করেন।

নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মো. হারুন অর রশিদ বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শ্রমিকদের পাওনা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, বিভিন্ন সময় গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা পাওনা আদায়, দাবি দাওয়াসহ মোট ১৯০টি মামলা করে। এসব মামলা তুলে নেয়ার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার অফার দেয় টেলিকম কর্তৃপক্ষ। একটা পর্যায়ে মামলা তুলে নেবে, কোম্পানিকে দায়মুক্তি দেবে, নিজেরা চাকরি থেকে রিজাইন করবে এবং ইউনিয়ন বিলুপ্ত করবে, সেই বিনিময়ে শ্রমিকরা ৪৩৭ কোটি টাকা পাবে মর্মে চুক্তি হয় শ্রমিক ও গ্রামীণ টেলিকমের মধ্যে। কিন্তু সেই টাকার বড় একটি অংশ নামে বেনামে আত্মসাৎ হয়েছে। তিনি আরো জানান, গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ও বর্তমান এমডি এই ২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর সঙ্গে জড়িত। মধ্যস্ততার জন্য আইনজীবী ১৬ কোটি টাকা নিয়েছে বলেও প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ডিবি গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) এসএম রেজাউল হক জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিবি-গুলশান বিভাগ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায়। গ্রেপ্তারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আত্মসাতের টাকা তারা কোথায় রেখেছেন বা কি কাজে ব্যবহার করেছেন সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রিমান্ড শেষে উর্ধ্বতন স্যাররা বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
মিরপুর মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারীদের স্থায়ী না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ক্রমাগত নবায়ন করে। শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ ৮০-১০:১০ অনুপাতে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বরাবর দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নয়’ এবং ‘কোম্পানি অলাভজনক’ ইত্যাদি কথা বলে শ্রমিকদের আইনানুগ লভ্যাংশ দেয়া থেকে বিরত থাকে।

বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কারণে গত ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে একসঙ্গে ৯৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করে। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও লভ্যাংশ পাওনা, বেআইনিভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পর কোম্পানিতে পুনর্বহাল, কোর্টের আদেশ অনুযায়ী পুনর্বহালের পরও দায়িত্ব না দিলে-কনটেমপ্ট অব কোর্ট, কোম্পানির অবসায়ন দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে শ্রমিকরা এবং শ্রমিক ইউনিয়ন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শ্রম আদালত এবং হাইকোর্টে প্রায় ১৯০টি মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন।

তড়িঘড়ি করে অনেকটা গোপনে এসব মামলা উত্তোলন, শ্রমিকদের অর্থ প্রদান এবং প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। গ্রামীণ টেলিকম এবং গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট একাউন্ট খোলা হয়। ২০১০-২০২২ পর্যন্ত প্রতি বছর কোম্পানির মোট লভ্যাংশের ৫ শতাংশ টাকা হারে সেই সেটেলমেন্ট একাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা দেয়া হয়। একাউন্টটি থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়। শ্রমিকদের সব পাওনাদি ওই একাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা।

চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট একাউন্ট থেকে শ্রমিকদের পাওনা এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ব্যতীত অন্য কোনো অর্থ ছাড় করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিধি বহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং ওই দুই সিবিএ কর্মচারীসহ ইউনিয়নের কিছু নেতার যোগসাজশে ওই একাউন্ট থেকে গত ১৭ মে এবং ২৫ মে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে নিয়ে আসা হয়।
গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের ওই একাউন্টের মোট তিনজন সিগনেটরি ছিলেন। তারা হলেন- সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং মামলার বাদী অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান। অন্যান্য শ্রমিকদের মতো টাকা পাওয়ার পরও যোগসাজশে সিবিএ সভাপতি কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান এবং সহ-সভাপতি মাইনুল হাসান ইউনিয়নের একাউন্ট থেকে তাদের ডাচ বাংলা ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একাউন্টে তিন কোটি করে মোট নয় কোটি টাকা স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করে। ইউনিয়নের নিয়োজিত আইনজীবী অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিতভাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ফি ও পারিতোষিক হাতিয়ে নেয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments