দেশে সারা বছর যে পরিমাণ পশু জবাই করা হয়, তার ৬০ শতাংশই হয় ঈদুল আজহায় কোরবানির মাধ্যমে।
আজ রোববার ঈদের দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কোরবানির চামড়া দুপুর থেকে ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসছেন পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তায়। সেখানে আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন।
চামড়ার আমদানি কম হলেও গতবছরের তুলনায় দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। অবশ্য দাম বাড়ার বিপরীতে চামড়া সংরক্ষণ খরচ ৭০ টাকা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে লালবাগের পোস্তায় গিয়ে দেখা যায়, বিকেল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির চামড়া আসছে। আড়তদারদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে লালবাগের শায়েস্তা খান, রাজ নারায়ণ ধর রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন রোড। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন। তবে পশু কোরবানি এখনো পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় পোস্তায় এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি কাঁচা চামড়ার বেচা-কেনা। রাতের দিকে পুরোদমে চামড়া কেনাবেচা শুরু হবে। চামড়া কেনা চলবে আগামী এক মাস।
আজ বড় আকারের প্রতিটি চামড়া ৮৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ছোট ও মাঝারি আকারের চামড়াগুলো ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে৷ এছাড়া গড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ছমির হানিফ অ্যান্ড সন্সের মালিক হাজী মো. ছমির উদ্দিন বলেন, ৪৬ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করছি। এখন পোস্তায় আগের মতো আর চামড়া আসে না। অনেক চামড়া সরাসরি ট্যানারিতে চলে যায়। তাই মনে হচ্ছে আমদানি কম। আগে হাজার হাজার ফড়িয়া আসতো এখন আর তারা আসে না। কারণ ফড়িয়াদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই এবং তারা সরাসরি ট্যানারি মালিকের কাছে বিক্রি করে দেয়। এবছর প্রতিটি চামড়ার দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে লবণ ও শ্রমিকের দাম বাড়ায় চামড়া সংরক্ষণ খরচ বেড়েছে ৭০ টাকা। ট্যানারি মালিকরা যদি সরকার নির্ধারিত দাম দেয় তাহলে আড়তদাররা লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যাবে।
অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের কোরবানির পশুর চামড়া পোস্তায় আসতে শুরু করেছে। এ বছর চামড়ার আমদানি কম৷ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনছে ট্যানারি মালিকরা। এছাড়া এবছর মৌসুমী ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম। তবে মাদ্রাসা ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের বেশি দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর চামড়ার লোকসান দিয়ে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে। অর্থ সংকটে অনেক ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন না। এ বছর আমরা গরুর চামড়া ৫৫ লাখ আর মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ২৭ লাখ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি সংগ্রহ করতে পারবো। তবে ঈদের তিন দিন সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করতে পারবো। পাশাপাশি লবণযুক্ত চামড়া ২৭ লাখ; সব মিলিয়ে পোস্তায় ৩০ থেকে ৩১ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হবে৷ এ বছর চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। পাশাপাশি লবণের দাম বস্তায় ৩৫০ টাকা ও শ্রমিক মূল্যও বড়েছে। ফলে আমাদের সংরক্ষণ খরচও বেড়েছে।
প্রতি বছরের মতো সরকার লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য ৪৭ থেকে ৫২ এবং সারা দেশে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা বর্গফুট নির্ধারিত আছে। গতবছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা। বকরির চামড়ার দাম নির্ধরণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা।
গরুর আকৃতি ও ওজনভেদে চামড়ার পরিমাণ কমবেশি হয়। সাধারণত গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ২২ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ বর্গফুট পর্যন্ত হয়। আর ছাগল-খাসির চামড়ার গড়হার হচ্ছে সাড়ে ৪ বর্গফুট। এ বছর কোরবানি থেকে চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা প্রায় ৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা করছেন।