বরিশালে কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এদিকে আড়তদারদের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকদের কারসাজির কারণে কোরবানির পশুর চামড়া তাদের কিনতে হচ্ছে অর্ধেকেরও কম দামে।
বরিশাল নগরীর পদ্মাবতী রোডে স্তুপ করে রাখা হয়েছে কোরবানির চামড়া।
রোববার থেকে সোমবার (১১ জুলাই) সকাল পর্যন্ত এখানে চামড়া রাখা থাকলেও ক্রেতাদের কোনো ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।
চামড়া বিক্রি করতে আসা মো. তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘তিনটি গরুর চামড়া বিক্রি করতে এখানে (পদ্মাবতী রোড) নিয়ে এসেছি। কিন্তু আড়তদাররা চামড়ার দাম ২৮০ টাকার বেশি দিতে চাচ্ছেন না। সরকার যে টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে তার ধারে কাছেও নেই এখানে চামড়ার দাম। তাই বাধ্য হয়ে তাদের বলা দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে।’
ছগির তালুকদার নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘বিভিন্ন বাসা থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছি। সংগ্রহ করা চামড়ার মধ্যে ছয়টি ছিল গরুর আর দুইটি ছাগলের। গরুর চামড়াগুলো ৩২০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেও ছাগলের চামড়া ফ্রিতে দিয়ে আসতে হয়েছে।’
চামড়া বিক্রেতারা জানান, ছাগলের চামড়ার দাম একদমই নেই। চামড়ার মূল্য নিয়ে ৬/৭ বছর ধরেই সমস্যা চলছে। এর আগে এমনটা ছিলো না। মূলত সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মানছে না ট্যানারি মালিকরা। আর ট্যানারি মালিকদের কাছে জিম্মি প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা।
মৌসুমী ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন বলেন, ৪০টি গরুর চামড়া বিক্রি করে ৯ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছি। যা খুবই কম দাম। কয়েক বছর ধরে এমনটা চলছে। আর ছাগলের চামড়ার তো কোনো দামই নেই। দেড় লাখ টাকা দামের একটি গরুর চামড়া বিক্রি করেছি সাড়ে ৩০০ টাকায়। আর এক লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করেছি ৩১০ টাকায়। এই হচ্ছে মার্কেটের অবস্থা।’
বরিশাল চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহ সম্পাদক জিল্লুর রহমান মাসুম বলেন, ‘সরকার চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করেছে সেই দামে চামড়া কিনতে গেলে আমরা মাঠে মারা পরবো। কারণ আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনলেও ট্যানারি মালিকরা আমাদের কাছ থেকে সেই দামে কিনবে না। এমনিতেই ২০১৬ সাল থেকে ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা বরিশালের ব্যবসায়ীদের। আমি নিজেই ট্যানারি মালিকদের কাছে পাবো ৩৪ লাখ টাকা। বেশি দামে চামড়া কিনে ঝুঁকি নেওয়াটা আমাদের জন্য বিপজ্জনক।‘
তিনি আরো বলেন, ‘লবণের দাম বেড়েছে, শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা সেই অর্থে মূল্য দিচ্ছে না। ছাগলের চামড়া ট্যানারি মালিকরা প্রতি পিস ২০০ টাকা করে কিনছেন। কিন্তু একটা ছাগলের চামড়ার পেছনে খরচই ৩৫০ টাকা। পুরোপুরি লোকসান ছাগলের চামড়ায়। তাই ছাগলের চামড়া কেউ ফ্রি দিয়ে গেলে রাখা হয়। আর এবারে গরুর চামড়ার দাম দেওয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। এর বেশি আমাদের পক্ষে দাম দেওয়া সম্ভব নয়।’