ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহন বন্ধ করতে বলেছেন হাইকোর্ট। যদি বন্ধ না করা হয় তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা বন্ধে ছয় দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির বিষয়টি নজরে নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ আদেশ দেন।
এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন- রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন্স) এ এম সালাউদ্দিন, পরিচালক (ট্রাফিক) নাহিদ হাসান খান ও সহজডটকমের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জুবায়ের হোসেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
আদালত রেলওয়ে কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কেন ট্রেনের ছাদে লোক ওঠে? এটা কী পয়সা ইনকামের পথ? ট্রেন জাতীয় সম্পদ। ট্রেন কী আপনারা গ্রাস করতে চাচ্ছেন?
তখন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, ছাদে যাত্রী ওঠা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবু এটা আমাদের ব্যর্থতা।
এ সময় আদালত বলেন, ছাদে বা দাঁড়িয়ে যারা যাচ্ছে তারা কী টাকা দিচ্ছে না? এটা তো দুর্নীতি। আর ছাদে যাত্রী ওঠানো বন্ধ করতে পারছেন না, এ অসহায়ত্ব প্রকাশ করলে কী দেশ চলবে? এটা কোনো কথাই না। আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অসম্ভব বলে কিছু নেই। এগুলো ঠিক হতে আর কতদিন সময় লাগবে? দেশ স্বাধীনের তো ৫০ বছর হয়ে গেছে। সব ক্ষেত্রে কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
এক পর্যায়ে সহজডটকমের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুবায়ের হোসেন বলেন, অনলাইনে টিকিট পেতে পেমেন্ট করতে ১৫ মিনিট সময় থাকে। কিন্তু তিনি (রনি) এক ঘণ্টা পর পেমেন্ট করেছিল তাই তিনি টিকিট পাননি। তবে তিন দিন পর সেই পেমেন্ট করা টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এ সময় দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সহজডটকম এটা বলে পার পেতে পারে না। গতকাল ভোক্তা অধিকার তাদের অনিয়ম পেয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে, যেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা রনি পাবেন।
তখন সহজডটকমের ভাইস প্রেসিডেন্ট আদালতকে বলেন, আমরা ভোক্তা অধিকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করব।
পরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ও ছাদে যাত্রী বহন বন্ধের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আগামী ৩১ জুলাইয়ে মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন আদালত।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, মহিউদ্দিন রনির আন্দোলনের যুক্তি এবং তার ছয় দফার বিষয়ে বুধবার জানতে চেয়েছিলেন আদালত। আমি রেলের ডিজির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে কমিটি গঠনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাদের জিএমকে চিঠি দিয়ে মহিউদ্দিন রনির দাবি-দাওয়া সম্পর্কে আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি গঠন করে সুপারিশের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, রেলের ডিজি আদালতে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। আদালত ওনাদের বক্তব্য শুনে ট্রেনের অব্যবস্থার বিষয়ে বলেছেন- ট্রেনের ছাদে কোনো যাত্রী বহন করতে পারবে না। আজ থেকে টিকিট কালোবাজারি চলবে না, তা বন্ধ করতে হবে। এ মর্মে উনারা মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এছাড়া ট্রেনের ছাদে যাত্রী বহন এবং টিকিট কালোবাজারিসহ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদন দেখে তারপর আদালত এ বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানান আইনজীবী আমিন উদ্দিন মানিক।
রেলওয়ের সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছয় দফা দাবি নিয়ে গত ৭ জুলাই থেকে একক অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তিনি ঢাবির শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের শিক্ষার্থী।
তার ছয় দফা দাবিগুলো হল- সহজডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে অথবা সহজকে বয়কট, টিকিট সিন্ডিকেট বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্ব সাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, ট্রেনের জনসাধারণের জানমালের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, ট্রেনের সিট সংখ্যা বা ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো, একইসঙ্গে সঠিক সেবার মান ও তথ্যের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন।