বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাজনীতি সচেতনতা ও সম্পৃক্ততাকে নিরুৎসাহিত করে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে কি না, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত। বুধবার দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পাঠানো এক চিঠিতে এসব কথা বলা হয়।
সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন চিঠিতে বলেন, সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে অবগত। ট্রাস্টের অধীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ মূলত সেশনজটমুক্ত, অলাভজনক ও অরাজনৈতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কর্তৃক গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যকে স্বাগত জানান।
চিঠিতে সমিতির চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পলিসি, শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে। বিশ্বমানের কোর্স-কারিকুলাম, সেমিস্টারভিত্তিক কর্মোপযোগী আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি, সেশনজট ও রাজনৈতিক সংঘাতমুক্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশ-বিদেশে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আস্থা ও সুনাম অর্জন করেছে।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নানামুখী প্রতিভার বিকাশ ও নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনের জন্য সহশিক্ষা ও অতিরিক্ত শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থী সংগঠন তথা বিভিন্ন বিভাগ ও বিষয়ভিত্তিক স্টুডেন্ট ক্লাব নিয়মিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
এসব ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় স্টুডেন্ট কমিটি কর্তৃক নিয়মিতভাবে আয়োজিত সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক চর্চা, মন ও শরীর গঠনের মতো আবশ্যিক কাজগুলো আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়।
চিঠিতে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের রাজনীতি সচেতনতা ও সম্পৃক্ততাকে নিরুৎসাহিত করে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে কি না, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যরা শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সহমত ও সন্তুষ্ট। ক্যাম্পাসের বাইরে ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় অংশগ্রহণ করার বিষয় একান্তই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ঠিক করবেন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের পলিসি, শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এরইমধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাদের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চলবে না।
সম্প্রতি এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী নিয়মকানুন করল, কোন রাজনৈতিক দলের কী ব্যবস্থা হলো, সেটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের বিষয়। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঠিক করে না। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপও করে না। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, তা সেই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলে সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাপেইজ/এএসএম