পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ইসলামে বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার জন্য পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার অবস্থান ঈমানের সঙ্গে। হাদিস শরিফে পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধাংশ বলা হয়েছে। হজরত আবু মালেক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’-(মুসলিম, হাদিস : ২২৩)
ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, গৃহের পরিচ্ছন্নতা কোনোটিই বাদ যায়নি। ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অন্তত শুক্রবারে গোসলের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি হাদিসে এটিকে ওয়াজিব বা অত্যাবশক বলা হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৭৯)
পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে জীবনযাপনকারীদের আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ভালোবাসেন তাওবাকারীদের এবং উত্তমরূপে পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের।’ (সুরা বাকারা : ২২২)
মদিনার নিকটবর্তী কুবা এলাকার লোকজন পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করত। তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৮)
এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবাবাসীদের বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! আল্লাহ পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করেছেন। তোমরা কিভাবে পবিত্র হও? তারা বলল, আমরা নামাজের জন্য অজু করি, নাপাকি থেকে গোসল করি এবং পানি দিয়ে পায়খানা পরিষ্কার করি। -(ইবন মাজাহ; ৩৫৫)
শারীরিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিচ্ছন্নতার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দাঁত ও মুখের যত্নের জন্য মিসওয়াক ব্যবহারকে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি না আমার উম্মত অথবা (তিনি বলেছেন) মানুষের জন্য কঠিন হতো তবে আমি তাদের প্রত্যেক নামাজের সঙ্গে মিসওয়াকের নির্দেশ (ওয়াজিব ঘোষণা) দিতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৮৭; মুসলিম, হাদিস : ২৫২)
এসবের সঙ্গে সঙ্গে ঘরবাড়ি, প্রকৃতি-পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ইসলামে। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্রকে পছন্দ করেন। আল্লাহ পরিচ্ছন্ন। তিনি পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। আল্লাহ মহৎ, তিনি মহত্ব পছন্দ করেন, আল্লাহ বদান্য, তিনি বদান্যতা পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের (ঘরের) উঠোনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৯৯)
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা লানতকারী (অভিশাপে আক্রান্ত হতে হয় এমন) দুইটি কাজ থেকে দূরে থাকো। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, লানতকারী কাজ দুইটি কী? তিনি বলেন, যে মানুষের চলাচলের রাস্তায় কিংবা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৮৮৫৩)
বাংলাপেইজ/এএসএম