Sunday, November 24, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
Homeলিডনিউজবিশ্বম্ভরপুরে দালালদের খপ্পরে পড়ে সৌদির মরুভূমিতে যুবকের মৃত্যু, আটক ৩ যুবকের বাঁচার...

বিশ্বম্ভরপুরে দালালদের খপ্পরে পড়ে সৌদির মরুভূমিতে যুবকের মৃত্যু, আটক ৩ যুবকের বাঁচার আকুতি ২ যুবক নিখোঁজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় সিরাজপুর গ্রামের মৃত রহিছ উদ্দিনের ছেলে, জালাল উদ্দীন (৫৫) ও তার ছেলে শহিদ মিয়া (২৩) নামের দুই দালালের খপ্পরে পড়ে সৌদি আরবের মরুভূমিতে ৬/৭ মাস আটকা থাকার পর না খেতে পেয়ে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় আকবর হোসেন (২৩) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত যুবক আকবর হোসেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সিরাজপুর পূর্ব পাড়া(পেটনা) গ্রামের আব্দুল মোতালিবের ছেলে।

গতকাল (৫ নভেম্বর শনিবার) বাংলাদেশ টাইম ১ টায় সৌদি আরবের মরুভূমির এক তালাবদ্ধ ঘরে তার মৃত্যু হয়। পরে নিহত আকবরের সাথে একই রুমে মরুভূমিতে আটক থাকা একই গ্রামের ৩ যুবক আকবরের মৃত্যুর সংবাদ তাদের পরিবারের লোকজনকে মোবাইল ফোনে জানানোসহ তালাবদ্ধ ঘরে আটক ওই ৩ যুবককে জীবিত উদ্ধার পূর্বক বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনার বাঁচার আকুতি জানায়।

এদিকে আকবরের মৃত্যুর সংবাদ আসার পর থেকেই গা ডাকা দিয়েছে দালাল জালাল উদ্দীন।

এ ঘটনায় নিহত আকবরের বড় ভাই আঃ ছালাম বাদি হয়ে দালাল জালাল উদ্দীন, তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুন ও ছেলে শহিদ মিয়াসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে বিশ্বম্ভরপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে নিহত আকবরের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে ও তার সাথে মরুভূমিতে আটক থাকা ৩ যুবক সহ নিখোঁজ ২ যুবককে দ্রুত উদ্ধার পূর্বক বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে ও দালালদের শাস্তির দাবিতে আজ রবিবার (৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪ টায় দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন শক্তিয়ার খলা বাজারের ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন পালন করে এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

মরুভূমিতে আটক ওই ৩ যুবক সিরাজপুর পূর্ব পাড়া গ্রামের মুতিন মিয়ার ছেলে শামীম (২৫), মিরাজ আলীর ছেলে নুর আলম (২৩) ও বজলুর রহমানের ছেলে রাসেল মিয়া (২৪)।

এদিকে দালাল জালাল উদ্দীন ও শহিদ মিয়া খপ্পরে পড়ে সৌদিতে গিয়ে গত দেড়মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে সিরাজপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে উসমান গণি (২৩) ও একই ইউনিয়নের আমড়িয়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে রুবেল মিয়া (২৫)।

এ ঘটনায় ওই দালালের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার স্থানীয় বিচার সালিশ করাসহ মামলা করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন। নিহত আকবরের লাশসহ দালাল জালাল উদ্দীনের ছেলে সৌদি আরবের থাকা শহিদের হাতে আটক থাকা ৩ যুবক ও নিখোঁজ ২ যুবককে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ দালাল জালাল উদ্দীন ও শহিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার গুলো।

জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সিরাজপুর গ্রামের দালাল জালাল উদ্দীনের ছেলে শহিদ মিয়া সৌদি থাকার সুবাদে জালাল উদ্দীন (৫৫) ও তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (৪৫) বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে সৌদি পাঠানোর দালালি শুরু করে। ভালো বেতন ও ভালো কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে নিহত আকবর ও আটক ওই ৩ যুবককে উধবোদ্ধ করে। অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে একই গ্রামের দালাল জালাল উদ্দীন তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুন ও সৌদি আরবের থাকা তাদের ছেলে শহিদ মিয়ার মাধ্যমে হতদরিদ্র ও ওই ৪ যুবক জায়গা জমি বিক্রি করে ও ব্যাংকের লোন দিয়ে প্রতি জনে ৪ লাখ টাকা করে দিয়ে পাড়ি জমায় মরুরভূমির দেশ সৌদিতে।

কিন্তু কথায় আছে, ‘অভাগা যেদিকে যায় নদী পানিও নাকি শুকিয়ে যায়।’

সৌদি আরব যাওয়ার পর ভালো বেতন ও কাজ পাওয়া তো দুরের কথা, উল্টো ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয় ওই ৪ যুবক ও তাদের পরিবার। তাদের কাজ না দিয়ে আকামার (লিগ্যাল হওয়ার নামে) দালাল জালাল ও তার ছেলে শহিদ প্রতি জনের কাছে দাবি করে আরও ১ লাখ টাকা করে। তাদেরকে আকামার পরিবর্তে আকবর সহ ওই ৩ যুবককে কোন এক মরুভূমিতে নিয়ে রাখা হয় একটি ঘরের ভিতর তালাবদ্ধ করে। এমনকি তাদের চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় ওই ৪ যুবকসহ তাদের পরিবারের লোকজনকে বিভিন্ন হুমকি ধামকিও দেয় দালাল জালাল ও শহিদ।

পরে এঘটনা জানতে পেরে ভুক্তভোগী ৪ যুবকের পরিবারের লোকজন স্থানীয় এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার শালিসে বসেও এর কোন সুরাহ পায়নি ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

এদিকে দালালদের চাহিদা মতো টাকা না পেয়ে আকামা না দেয়ায় মরুভূমির মধ্যে ঘরের ভিতর তালাবদ্ধ অবস্থায় গত ৬/৭ মাস খেতে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিনা চিকিৎসায় গতকাল ৫ নভেম্বর শনিবার বাংলাদেশ টাইম ১ টায় মারা যায় আকবর। এদিকে গত ১০ মাস পূর্বে একই প্রলোভন দেখিয়ে নিখোঁজ উসমান গণি ও রুবেল মিয়াকে সৌদি আরব নিয়ে যায় দালাল জালাল ও তার ছেলে শহিদ। সৌদি নেয়ার পর উসমান ও রুবেলকে কাজ না দিয়ে একই কায়দায় তাদের কাছে আরও ৫০ হাজার টাকা করে দাবি করে দালাল জালাল ও তার ছেলে শহিদ।

এ ঘটনায়ও উসমানের বড় ভাই ময়না মিয়া বাদি হয়ে দালালদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ে করে। মামলা দায়ের পর মামলা তুলে নিতে দালাল জালাল ও তার ছেলে শহিদ হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে।

এ বিষয়ে নিহত আকবরের মা জামেনা খাতুন(৪৮) বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এলাকার ময়-মুরব্বিদের নিয়ে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সালিসে ১৫ হাজার করে ৪ জনে আরও মোট ৬০ হাজার টাকা দেই জালালকে। এর পরেও আমার ছেলে সহ সবাইকে মরুভূমির ঘরে তালা দিয়া রাখছে। খানি দিছে না, শীতের মাইঝে কম্বল দিছেনা। আমার ছেলেরে দালাল জালাল ও তার ছেলে শহিদ মিয়া না খাওয়াইয়া চিকিৎসা না দিয়ে ঘরে মাঝে আটকাইয়া রাইখা মাইরা ফালাইছে। আমি এর বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানাই আমার আকবরের লাশ এক নজর আমি দেখতে চাই। ছেলে কথা বলতে গিয়ে বারবার মোর্চা যাচ্ছিলেন ও কান্নায় ভেঙে পড়েন আকবরের বাবা আব্দুল মোতালিব ও মা জামেনা খাতুন।

দালাল জালাল ও শহিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি নিখোঁজ দুই উসমা ও রুবেল সহ ঘরে আটকে রাখ ৩ যুবককে দ্রুত উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান উসমানের ভাই ময়না মিয়া।

উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মানব পাচার একটি ভয়ংকর অপরাধ। আজ দালাল জালাল ও তার ছেলে শহিদের জন্য একটি তাজা প্রাণ নিভে গেল। আরও প্রায় ১০ পরিবার জায়গায় জমি টাকা পয়সা তাদের দিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরছে। তাই দ্রুত জালালও শহিদকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিৎ।’

অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্বম্ভরপুর থানায় ওসি ইকবাল হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ তদন্তে নেমেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments