সন্তানদের জন্য দু’বেলার খাবার কেনার টাকা ছিল তার। তাই বাধ্য হয়ে খাবার কিনতে এক স্কুল শিক্ষকের কাছে চেয়েছিলেন মাত্র ৫০০ রুপি। কিন্তু তিনি সহায়তা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। ওই নারীর নাম সুভদ্রা। ফেজবুকে পোস্ট পর সুভদ্রাকে লাখ লাখ রুপি সহায়তা পাঠিয়েছেন বহু অচেনা মানুষ।
শেষ খবর অনুযায়ী, সুভদ্রা পেয়েছেন মোট ৫৫ লাখ রুপি; অর্থাৎ বাংলাদেশি অংকাটা দাড়ায় ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৬ বছর বয়সী সুভদ্রার স্বামী মারা গেছেন চলতি বছর আগস্টে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুর পর তিন ছেলে নিয়ে চরম অর্থকষ্টে পড়েন তিনি। চাকরি কিংবা কোনো কাজের জন্যও চেষ্টা করতে পারছিলেন না সুভদ্রা, কারণ সেরিব্রিয়াল পালসি নামের এক রোগের কারণে তার ছোট ছেলে প্রায় পঙ্গু। অসুস্থ এই ছেলে যত্ন নিতে সারাক্ষণ তাকে বাড়িতে থাকতে হয়।
গত শুক্রবার মেজ ছেলে অভিষেকের স্কুল শিক্ষিকা গিরিজা হরিকুমারের কাছে গিয়ে ৫০০ রুপি সহায়তা চান সুভদ্রা; বলেন, তার কাছে সন্তানদের খাবার কেনার জন্য তার কাছে কোনো অর্থ আর অবশিষ্ট নেই।
‘আমি তাকে ১ হাজার রুপি দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, তার জন্য কিছু একটা করব,’ বিবিসিকে বলেন গিরিজা হরিকুমার।
হিন্দি ভাষার শিক্ষিকা গিরিজা আরও বলেন, অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি সুভদ্রার বাড়িতে গিয়ে তাদের পারিবারিক অবস্থাও সরেজমিনে দেখে এসেছেন তিনি।
‘সেখানে গিয়ে দেখলাম, রান্না ঘরে মাত্র দু’তিন মুঠো চাল অবশিষ্ট আছে। আমি অভিষেকের কাছে আগেও জানতে চেয়েছিলাম— বাবার মৃত্যুর পর তারা কোনো সমস্যায় আছে কিনা। সেসময় সে কিছু বলেনি; এই প্রথম তার মা সাহায্যের জন্য হাত পেতেছে।’
‘(বাড়ির) অবস্থা দেখে আমার মনে হলো, তাকে সামান্য কিছু অর্থ দিলে হয়তো আজ এবং আগামীকালের খাবার সে যোগাড় করতে পারবে, কিন্তু তাতে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।’
সুভদ্রার বাড়ি থেকে ফিরে শুক্রবার সন্ধ্যায় সুভদ্রার পরিবারের জন্য সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন গিরিজা। সেখানে সুভদ্রার ব্যাংক হিসাব নম্বরও দিয়েছিলেন তিনি, যেন সহায়তা সরাসরি তার কাছেই পৌঁছায়।
পোস্টটি দেওয়ার পর তা ভাইরাল হয়ে যায় এবং শত শত মানুষ সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সুভদ্রার ব্যাংক হিসাবে অর্থ পাঠাতে থাকেন। সোমবার হিসেব করে দেখা যায়, ব্যাংক হিসাবে জমা পড়া রুপির পরিমাণ ৫৫ লাখে পৌঁছে গেছে।
এই অর্থের কিছু অংশ দিয়ে সুভদ্রাদের বাড়ি মেরামত করা হবে। বাকিটা ব্যাংকেই জমা থাকবে তাদের খরচ চালানোর জন্য। সাহায্য চেয়ে করা আবেদনটিও ইতোমধ্যে ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন গিরিজা হরিকুমার।
বাংলাপেইজ/এএসএম