সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকা, চারাগাঁও সীমান্ত এলাকা ও টেকেরঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকটি কয়লা চোরাকারবারী সিন্ডিকেট চক্র দাপটের সাথে প্রতিদিন ও রাতের আঁধারে অবৈধভাবে ভারত থেকে হাজার বস্তা কয়লা পাচাঁর করে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্র নগর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে কয়লা পাচার করার সময় স্থানীয় বৈধ কয়লা ব্যবসায়ীরা বাঁধা দিতে গলে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা তাদের উপর হামলা করে।
পরে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ২/৩ ঘন্টা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষে দুই পক্ষের প্রায় ১০/১২ আহত হয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
এনিয়ে চোরাকারবারি ও স্থানীয় বৈধ কয়লা ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম উত্তেজিত বিরাজ করছে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনায়।
সরেজমিনে ঘুরে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার তাহিরপুর উপজেলার গত প্রায় ৭/৬ মাস ধরে বড়ছড়া শুল্কস্টেশন সংলগ্ন টেকেরঘাট ও বালিয়ঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা, চুনাপাথর খনিপ্রকল্প, বরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ও রাতের আঁধারে ভারত থেকে প্লাষ্টিকের বস্তা ভর্তি করে শতশত মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে প্রথমে বসতবাড়ির ভিতরে মজুত করে রাখে চোরাকারবারীরা। পরে রাত গভীর হলে পাচাঁরকৃত সেই অবৈধ কয়লা ঠেলাগাড়ি বোঝাই করে বড়ছড়া শুল্কস্টেশনের বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এরপর টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের পিছনে অবস্থিত নদীতে অবৈধ কয়লা ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে এবং বালিয়াঘাট ক্যাম্পের সামনে দিয়ে পাটলাই নদীতে ডুকে। তারপর নদীপথে শ্রীপুর-সোলেমানপর এলাকা হয়ে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা ও কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। তবে সাংবাদিকদের তথ্যের ভিত্তিতে তাহিরপুর থানা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা মাঝেমধ্যে চোরাই কয়লার বস্তা আটক করলেও নেয়া হয়নি এরসাথে জড়িত চোরাকারবারি বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ। যার ফলে ভারত থেকে চোরাই কয়লা পাচারে আরও বেপরোয়া হয় উঠেছে ওইসব কয়লা পাচারকারী সিন্ডিকেট সদস্যরা। ওই সিন্ডিকেট চক্রটি এখন কয়লা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে আরও জানা যায়, পাচাঁরকৃত ওইসব চোরাই কয়লার প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) অবৈধ কয়লা থেকে সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে ১৭০টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয়ধানকারী ৮টি মামলার আসামী ইয়াবা কালাম মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া, ইদ্রিস আলী ও টেকেরঘাট ক্যাম্পের সোর্স পরিচয়ধারী ইসাক মিয়া গং। এসব সোর্স পরিচয়ধারীদের নেতৃত্বে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ ভাবে ভারত থেকে শতশত মেঃটন চোরাই কয়লা পাঁচার করে দাপটের সাথে ওপেন বিক্রি করা হলেও এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়- তাহিরপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ তরফদার থাকাকালীন সময় পাটলাই নদী, লাকম, টেকেরঘাট ও দুধেরআউটা গ্রামে একাধিক অভিযান চালিয়ে সোর্স ইয়াবা কালাম, জিয়াউর রহমান জিয়া, চোরাকারবারী রতন মহলদার, মানিক মহলদার সহ তাদের সিন্ডিকেডের বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য, কয়লা ও নৌকা আটক করাসহ থানায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে র্যাব এসে অভিযান চালিয়ে সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র, মদ, গাঁজা ও ইয়াবাসহ অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
পরে সোর্স ও চোরাকারবারীরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবার তাদের অবৈধ কাজ পুরো দমে শুরু করে।
তাই তাহিরপুর সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করার জন্য র্যাব ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বৈধ কয়লা ব্যবসায়ী ও সচেতন এলাকাবাসী।
এব্যাপারে তাহিরপুর সাংবাদিক মোজ্জামেল আলম ভূইয়া বলেন- চোরাচালানের বিরুদ্ধে আমরা (সাংবাদিকরা) চোরাচালান বন্ধে বিভিন্ন সময় টেকেরঘাট ও বালিয়াঘাট ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা বিজিবি কমান্ডারদের বারবার তথ্য দিয়ে আসলেও বিজিবির পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোন উল্লেখ যোগ্য পদক্ষেপ। দেশের স্বার্থে চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে তথ্য দিয়ে বিজিবিকে সহযোগিতা করলেও উল্টো মিথ্যা মামলা হয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক আবু জাহান বলেন, গত এক মাস পূর্বে দুই স্টিল বডি নৌকা বোঝাই করে পাঠলাই নদী দিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে আমার কয়েকজন সাংবাদিক তাহিরপুর থানা পুলিশকে জানানোর পর ওই দুই নৌকা আটক করে থানা পুলিশ। দুঃখের বিষয় হলো দেশের স্বার্থে পুলিশ তথ্য দিয়ে চোরাই কয়লার নৌকা আটক করানোর অপরাধে আমিসহ ৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ওই চোরাই কয়লার মালিক তার সহযোগীদের স্বাক্ষী করে আদালতে একটি মিথ্যা চাঁদবাজির মামলা করে।
রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সোর্সদের কয়লা পাচাঁরের ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমান বলেন- সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।