Thursday, November 21, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
Homeফিচার`সমুদ্রশিল্পী মারুফের গল্প'

`সমুদ্রশিল্পী মারুফের গল্প’

মারুফ, এখন সবার কাছে এক পরিচিত নাম। যিনি পেশায় একজন নাবিক, হংকং ভিত্তিক একটি কোম্পানীর অয়েল ট্যাংকার জাহাজের সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত। নাবিক জীবনে থাকে নানাবিধ বৈচিত্র্যময়তা, অনেক অনেক গল্প। সেসব গল্প নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। তবে, এই নাবিক পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি অনন্য হয়ে উঠেছেন তার গানের মাধ্যমে!

গানের প্রতি তার ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই। যতটা অসাধারণ কন্ঠ হলে তাকে “সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত উপহার” বলা যায়, তার কন্ঠ ঠিক তেমনই। তিনি যেন গ্রীক পুরাণের সঙ্গীতের দেবতা এ্যাপোলো, যিনি তার কন্ঠসুধা দিয়ে পেয়েছিলেন ‘সঙ্গীতের দেবতা’ হবার স্বীকৃতি। অথবা, তিনি রূপকথার ‘ফিনিক্স পাখি’, যার গান শুনে সূর্যদেবতা মুগ্ধ হয়ে থামিয়ে দিতেন তার রথ! মারুফের গান এতটাই মনোমুগ্ধকর, যা অনেকের জীবনে স্বস্তি এবং প্রশান্তি এনে দেয়!

সমুদ্র মানে যে শুধু অথৈ জলরাশি নয়, সমুদ্র মানে কবিতা কিংবা গান, তা সে প্রমাণ করে দিয়েছে। সমুদ্র কখনো কখনো খুব উত্তাল হয়ে ওঠে, ঝড়ের কবলে পড়ে, আবার কখনো লজ্জাবতী ষোড়শী মেয়ের মতো শান্ত রূপ ধারণ করে। আকাশ আর সমুদ্রের দিগন্তরেখায় উজাড় করে রংধনু ওঠে। গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নারা অকূল সমুদ্রে আঁচল মেলে দেয়। কখনো আবার তিব্বত প্রদেশ থেকে দেখতে পাওয়া ঝুরি ভর্তি তারার মতো ঝকঝকে তারার মেলা বসে আকাশে।

এক পৃথিবী প্রশান্তি নিয়ে সমুদ্রে ভোর হয়। কালারপ্লেট অনেকগুলো রং সমেত উল্টে গেলে যেমন বৈচিত্র্যতা পায়, তেমন রং এর বৈচিত্র্যময়তা নিয়ে মায়াময় গোধূলী নামে সমুদ্রে। মারুফ এসব সুন্দর দৃশ্য দেখে অনুপ্রাণিত হয় খুব, হাতে তুলে নেয় ইউকেলেলে আর কন্ঠে তুলে নেয় গান। তার দরদভরা কন্ঠের গান সমুদ্রের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দেয়, নাবিক জীবনের গল্পগুলোকে আরো বর্ণাঢ্য করে তোলে!

তার কভার করা গানগুলো যেন তারই মনের কথা বলে, জীবনের কথা বলে। “ওরে নীল দরিয়া”, “আহারে জীবন” কিংবা “পথের ক্লান্তি ভুলে” এ গানগুলো যেন তারই মনের ব্যকুলতা প্রকাশ করে! তার ইচ্ছে, মৌলিক গান করার এবং সুযোগ পেলে নাটকে বা সিনেমাতেও গান করবেন। গান হচ্ছে তার জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কিংবা পছন্দের জিনিস। গান তার কাছে অক্সিজেনের মতো, গান ছাড়া বাঁচার কথা তিনি যেন ভাবতেই পারেন না!

তার জনপ্রিয়তা শুরু হয় “পেন্সিল” প্ল্যাটফর্ম থেকে। “পেন্সিল” একটি অনলাইন ভিত্তিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের প্ল্যাটফর্ম। তিনি গান গেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং পেন্সিলে প্রকাশ করতেন আর মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনত। এভাবেই আজ তিনি সবার কাছে এক পরিচিত মুখ, সবার প্রিয় শিল্পী। তিনি কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চান না, আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাও চান না, গানকে ভালোবেসে গানের সাথে থেকে যেতে চান সারাজীবন। তার গান যদি কাউকে প্রশান্তি দেয়, দহনজ্বালা থেকে মুক্তি দেয় কিংবা আনন্দে বেঁচে থাকতে শেখায়, সেটাই একজন গায়ক হিসেবে তার বড় প্রাপ্তি!

তিনি শুধু গানই করেন না। যেহেতু জাহাজের এই জীবন নিয়ে রয়েছে মানুষের অশেষ কৌতুহল, তাই সবাইকে এ জীবন সম্পর্কে জানাতে তিনি তার ফেসবুক পেইজে ও ইউটিউব চ্যানেলে ছোট ছোট ভ্লগ প্রকাশ করেন। যাতে তুলে ধরা হয় অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য, নাবিক জীবনের নানান ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞতা। তার ভ্লগগুলো বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়। দর্শক শ্রোতাদের কথা ভেবে তিনিও চেষ্টা করেন ব্যস্ততার ভেতরেও সবাইকে জাহাজের জীবন সম্পর্কে জানাতে। সবার সাথে এ জীবনের সুখ-দুঃখগুলো ভাগাভাগি করে নিতে তারও খুব ভালোলাগে।

সবার প্রিয় এই শিল্পীর শৈশব-কৈশোর কেটেছে সিল্ক সিটি হিসেবে খ্যাত রাজশাহীতে৷ এরপর একটি বেসরকারি মেরিটাইম ইন্সটিটিউট থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর পড়াশুনা করে শিক্ষানবীশ হিসেবে জাহাজে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রফেশনাল ডিগ্রী নিয়ে শুরু করেন তার বর্ণাঢ্য নাবিক জীবন। নাবিক এবং শিল্পী মারুফের জন্য শুভ কামনা সবসময়।

বাংলাপেইজ/এএসএম

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments