বরিশালের হিজলায় ভয়ংকর বালু খেকোর উত্থান হয়েছে। এ যেন চাঁদপুরে চোরা সেলিমকেও হার মানায়। তার দস্যুতার দাপটে অসহায় প্রশাসন। দিন রাত ২৪ ঘন্টায় জোরপূর্বক কেটে নিচ্ছে মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা শত একর কৃষি জমির মাটি ও বালু। “জোর যার মুলুক তার” শ্লোগান বাস্তবায়ন করছেন জাকির। তিনি কখনো নৌ পুলিশের সোর্স, কখনো কোচগার্ডের সোর্স, হিসেবে কাজ করেন। এই ভয়ংকর ভূমিদস্য এই জাকির শিকদার এখন অসহায় কৃষকের কাছে মূর্তিমান আতংকে পরিনত হয়েছেন। কৃষকের আর্তনাদ পৌঁছায় না প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের কানে। শত শত লিখিত অভিযোগের পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ফলে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে জাকির। এ বালু থেকো জাকিরের ক্ষমতার দাপট আর অর্থের কাছে অসহায় হড়ে পড়েছে প্রশাসন ও স্থানীয়রা।
বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর তীরের মাটি যাচ্ছে অর্ধশত অবৈধ ইটের ভাটায়। ঘুমিয়ে রয়েছে বরিশালের পরিবেশ অধিদপ্তর। অসহায় কৃষকদের লিখিত অভিযোগের পরও তাদের ঘুম ভাঙ্গেনি।
একজন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের হাতে চাঁদপুরের ভয়ংকর বালু খেকো চোরা সেলিমের সাম্রাজ্যের পতন ঘটলেও রবিশালের বালু থেকো জাকিরের উত্থানের পতন ঘটবে কখন সে অপেক্ষায় প্রহর গুনছে অসহায় কৃষকরা।
বরিশাল ও চাঁদপুর এ দুই জেলার সীমান্তবর্তী অংশে মেঘনা নদীর তীর থেকে শত শত একর জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন। এসব মাটি কাটায় স্প্রিড বোর্ডে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জাকির বাহিনীর একাধিক লোক পাহাড়া দিতে দেখা যায়। চাঁদপুরের বালু থেকো সেলিমের চেয়ে ভয়ংকর বাহিনী জাকিরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাকির সিকদার নেতৃত্বে, কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই অন্যের কৃষি জমি নষ্ট করে জোরপূর্বক ভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, এতে করে একদিকে যেমন নদীর পাড় ভাঙছে, তেমনি ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে না খেয়ে অসহায় কৃষকদের মরতে হবে। স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালীর পকেটে যাচ্ছে এই মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা। হুমকি ধমকি আর প্রাণ নাশের ভয়ে কেউ জাকির বিরুদ্ধে কথা বলতে চায় না। কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি থেকে বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাদের ইট ভাটায়।
হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন মাস্টারের ভাই মো. মান্নান এই মাটি কেটে স্থানীয় মিলন চেয়ারম্যানের ইটভাটায় বিক্রি ছাত্রছায়ায় এই ফসলের জমি নষ্ট করছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। ভয়ংকর এ ভূমিদস্যু জাকির শিকদার কখনো নিজেকে পুলিশের সোর্স আবার কখনো কোচগার্ডের সোর্স হিসেবে পরিচয় দিয়ে এসব কাজ করে আসছে। জাকির শিকদার নিজেকে তবলীগ জমায়াতের দ্বীনদার ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে অসহায় কৃষকদের সফলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে ।
এ নিয়ে দেশের জাতীয় দৈনিক ও একাধিক স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক বার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গত বুধবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার নদী তীরের মাটি কাটা বন্ধে টাস্কফোর্সের সমন্বয়ে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের মেঘনা বাজার এলাকার ১০০ ফুট দূরে নদীতীরে ১৫ থেকে ২০টি ট্রলারে একযোগে মাটি কেটে নিতে দেখা গেছে।
সেখানকার শ্রমিকেরা জানান, মান্নান ও জাকির শিকদার নিজের জমি দাবি করে প্রতি ফুট মাটি ৬০ পয়সা করে ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। যদিও এই বিশাল চর খাসজমি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
এলাকাবাসী জানান, তাদের কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে, এ নিয়ে নদী রক্ষা কমিশন, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জোর দাবী জানায়।