Saturday, November 23, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
Homeআজকের শীর্ষ সংবাদমৃত্যুর আগে যা বলেছিলেন আমাজনে ৪০ দিন বেঁচে থাকা সেই শিশুদের মা

মৃত্যুর আগে যা বলেছিলেন আমাজনে ৪০ দিন বেঁচে থাকা সেই শিশুদের মা

লাতিন আমেরিকার কলম্বিয়ায় আমাজন জঙ্গলের গভীরে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর জীবিত উদ্ধার হওয়া চার শিশুর মধ্যে দুটির প্রথম কথা ছিল, ‘আমি ক্ষুধার্ত’ এবং ‘আমার মা মারা গেছেন’। উড়োজাহাজটি বিধ্বস্তের পর চার দিন তাদের মা বেঁচে ছিলেন বলেও জানায় তারা।

উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া কর্মীরা এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান। তাদের সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার কলম্বিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভিসিতে সম্প্রচারিত হয়েছে।

গত শুক্রবার জীবিত উদ্ধার হওয়া চার শিশুর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির বয়স ১৩ বছর। আর ছোটটির মাত্র ১ বছর। অপর দুই শিশুর বয়স যথাক্রমে ৪ ও ৯ বছর।

লেসলি নামের বড় মেয়েশিশুটি উদ্ধারকর্মীদের বলেন, তার মা মৃত্যুর আগে বলেন, ‘বাচ্চারা, তোমাদের এখান (আমাজন জঙ্গল) থেকে অবশ্যই বের হতে হবে। তোমাদের বাবা খুবই স্নেহশীল মানুষ। আমি তোমাদের যতটা ভালোবেসেছি, সেও তোমাদের ততটাই ভালোবাসা দিয়ে বড় করবে।’

নিকোলাস ওরদোনেজ গোমেজ নামের এক উদ্ধারকর্মী সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় মেয়েশিশু লেসলি আমার দিকে দৌড়ে আসে, তখন তার কোলে ছিল সবচেয়ে ছোট শিশুটি। লেসলি বলে, “আমি ক্ষুধার্ত”।’

গোমেজ আরো বলেন, ‘বাকি দুই ছেলেশিশুর মধ্যে একটি শুয়ে ছিল। সে উঠে দাঁড়ায় এবং আমাকে বলে, “আমার মা মারা গেছেন”।’

তৎক্ষণাৎ ওই শিশুদের সঙ্গে ইতিবাচক কথাবার্তা শুরু করেন উল্লেখ করে এই উদ্ধারকর্মী আরও বলেন, ‘আমাদের পাঠিয়েছে তোমাদের পরিবার, তোমাদের বাবা, কাকা। আমরা তাদের বন্ধু। ফলে আমরাও তোমাদের পরিবারের সদস্য!’

পরে তারা গান ধরেন এবং শিশুদের হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করেন বলে জানান গোমেজ।

এর আগে শিশুদের উদ্ধারের পর কর্তৃপক্ষ জানায়, টানা ৪০ দিন গভীর জঙ্গলে থাকার পরও এই চার শিশু বেঁচে ছিল তাদের নানির কল্যাণে। এই চার শিশুর সবচেয়ে বড়টিকে নানি খুব ছোটবেলা থেকে গভীর জঙ্গলে মাছ ধরা ও শিকারের কলাকৌশল শিখিয়েছেন।

এমনকি প্রকৃতি থেকে খাবার সংগ্রহের উপায়ও শেখানো হয়েছিল এই শিশুদের। উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর এসব কৌশল চার শিশুকে আমাজনের গভীরে বেঁচে থাকার জন্য খাবার সংগ্রহে সহায়তা করেছে।

গত ১ মে ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ আমাজন জঙ্গলে বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলটসহ প্রাপ্তবয়স্ক তিন ব্যক্তি নিহত হন। উড়োজাহাজে থাকা চার শিশুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুদের মা মাগদালেনা মিউকুটিউ রয়েছেন। তিনি হুইতোতো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেত্রী ছিলেন।

তল্লাশি চালাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরসহ ১৫০ সেনাকে মোতায়েন করা হয়। যোগ দেন নিখোঁজ শিশুদের বাবাসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা।

দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর গত শুক্রবার কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এক টুইটে জানান, নিখোঁজ চার শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনাকে ‘পুরো দেশের জন্য আনন্দজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাগুয়ার, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ নানা বন্য পশুপাখির আবাস আমাজন জঙ্গলে শিশু চারটির এত দিন বেঁচে থাকাকে ‘অলৌকিক’ বলছেন কেউ কেউ। অনেকেরই মনে প্রশ্ন, এত দিন কীভাবে বেঁচে ছিল এসব শিশু?

কলম্বিয়ার জাতীয় আদিবাসী সংগঠনের লুই আকোস্তা জানান, শিশুরা বিভিন্ন বীজ, ফল, শিকড়বাকড় খেয়েছে। তারা যেগুলোকে খাওয়া যাবে বলে মনে করেছে, সেগুলোই খেয়েছে।

উদ্ধারের পর চার শিশুকে সেনাবাহিনীর উড়োজাহাজে করে রাজধানী বোগোতায় নেয়া হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের নেয়া হয় হাসপাতালে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইভান ভেলাসকুজ শিশুদের দেখতে হাসপাতালে যান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা সেরে উঠছে। তবে এখন পর্যন্ত তারা শক্ত খাবার খেতে পারছে না।

সূত্র: এএফপি, নিউইয়র্ক পোস্ট

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments