Friday, November 22, 2024
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
Homeআজকের শীর্ষ সংবাদলন্ডনে পলাশী দিবসের আলোচনা ও ভারতের নতুন সংসদ ভবনের ম্যুরালে বাংলাদেশকে যুক্ত...

লন্ডনে পলাশী দিবসের আলোচনা ও ভারতের নতুন সংসদ ভবনের ম্যুরালে বাংলাদেশকে যুক্ত করে ‘অখন্ড ভারত’ মানচিত্র স্থাপনের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাঙালির প্রতিবাদ সভা অনুষ্টিত

খালেদ মাসুদ রনি, বৃটেন থেকে: পলাশী দিবসের আলোচনা ও ভারতের নতুন সংসদ ভবনের ম্যুরালে বাংলাদেশকে যুক্ত করে ‘অখন্ড ভারত’ মানচিত্র স্থাপনের বিরুদ্ধে লন্ডনে বিশ্ব বাঙালির প্রতিবাদ সভা অনুষ্টিত হয়েছে।

বিশ্ব বাঙালির প্রতিবাদ সভায় ‘অখণ্ড বাংলাদেশ’ মানচিত্র প্রদর্শন করলো ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ (দ্যা ইউনাইটেড বেঙ্গল মুভমেন্ট)। ফলে ‘অখণ্ড ভারত’ মানচিত্র নিয়ে বিতর্ক নতুন মাত্রা পেল।

“অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন” (দ্যা ইউনাইটেড বেঙ্গল মুভমেন্ট) এর উদ্যোগে ও “দ্যা গ্রেট বেঙ্গল টুডে”এর পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব গত শুক্রবার লন্ডন-বাংলা প্রেসলাব মিলনায়তনে পলাশী দিবসের আলোচনা ও ভারতের নতুন সংসদ ভবনের ম্যুরালে বাংলাদেশকে যুক্ত করে ‘অখন্ড ভারত’ মানচিত্র স্থাপনের বিরুদ্ধে এ প্রতিবাদ সভায় এই মানচিত্র প্রদর্শিত হয়।

‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ (দ্যা ইউনাইটেড বেঙ্গল মুভমেন্ট) এর আহবায়ক ও ‘দ্যা গ্রেট বেঙ্গল টুডে’ এর প্রধান সম্পাদক হাসনাত আরিয়ান খানের সভাপতিত্বে ও সাপ্তাহিক সুরমার বার্তা সম্পাদক কবি কাইয়ুম আব্দুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা ও প্রতিবাদ সভায় তৃতীয় বাংলাখ্যাত বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির বরেণ্য গুণীজনরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সভার সভাপতি আলোচনা ও প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত গুণীজনদের স্বাগত জানান ও অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

যুক্তরাজ্যে পলাশী দিবসের আলোচনা ও ভারতের নতুন সংসদ ভবনের ম্যুরালে বাংলাদেশকে যুক্ত করে ‘অখন্ড ভারত’ মানচিত্র স্থাপনের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাঙালির প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, ভারতের নবনির্মিত সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারত’ মানচিত্র স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চরমভাবে অপমান করা হয়েছে।

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, দ্বিজাতীতত্তের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারত রাষ্ট্রের অখণ্ড অংশ হিসেবে মানচিত্রে দেখানোর ঔদ্ধত্য আন্তর্জাতিক অপরাধের সামিল। আরএসএস ও বিজেপি সরকারের এই সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা কোনদিনই সফল হবে না।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা ভারতের বিজেপি সরকারের এমন দৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে ভারতের নবনির্মিত সংসদ ভবনে স্থাপিত ‘অখণ্ড ভারত’ মানচিত্র অপসারণের দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন, পলাশীর প্রান্তে নবাবের পরাজয় আমাদের গোটা জাতির জন্য বিরাট বড় শিক্ষা।

হতাশাজনক হলেও সত্য, পলাশী যুদ্ধের পরাজয় থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আজও আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। তৎকালীন সময়ে জাতির মধ্যে ছিলো না কোন ঐক্যবদ্ধতা। ফলে, রবার্ট ক্লাইভের সামান্য সামরিক শক্তি ও কূটকৌশলের কাছে বাংলা হারায় তার স্বাধীনতা। আজ আমাদেরকে অর্জন করতে হবে জাতীয় ঐক্যের শক্তি।

নিজেদের মধ্যে সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও ভেদাভেদকে ভুলে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশপ্রেমকে শুধু জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাস সচেতন হতে হবে। ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। সদাসর্বদা তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত রাখতে হবে।

প্রিয় জন্মভূমিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের থেকে মুক্ত রাখতে হলে সৎ, যোগ্য ও আদর্শবাদী দেশপ্রেমিক নাগরিক গঠনের লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলে আর কখনো পলাশীর পটভূমি রচিত হবে না এ সোনার বাংলায়।

পলাশী দিবসের আলোচনা ও ‘অখন্ড ভারত’ মানচিত্র স্থাপনের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাঙালির প্রতিবাদ সভায় বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির বরেণ্য গুণীজনদের মধ্যে লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী; লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন; লেখক ও গবেষক ব্যারিষ্টার নাজির আহমেদ; প্রাবন্ধিক ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব পীর আহমেদ কুতুব; লেখক, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক আবদুল মুনেম জাহেদী ক্যারল, সাংবাদিক ও কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট বদরুজ্জামান বাবুল, ইউকে নিউজ বাংলার পরিচালক সাংবাদিক মহিউদ্দিন আফজাল এবং কবি ও চিন্তক আহমেদ ময়েজ আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী বরেণ্য গুণীজনরা বিলেতের মাটিতে এই প্রথমবারের মত পলাশী দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। সেইসাথে বাংলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুগে যুগে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
এফএম নিউজ টিভির পরিচালক ও নির্মাতা সাংবাদিক ফয়সল মাহমুদ, সাংবাদিক মোহাম্মদ মাসুদুজ্জামান, সাংবাদিক আজিজুর রহমান, আলোকচিত্রী ফজলুল হক, দর্পণ টিভি পরিচালক সাংবাদিক রহমত আলী, ইক্যুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক মাহবুব আলী খানশূর আলোচনা ও প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।

সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ (দ্যা ইউনাইটেড বেঙ্গল মুভমেন্ট) এর আহবায়ক ও ‘দ্যা গ্রেট বেঙ্গল টুডে’ এর প্রধান সম্পাদক হাসনাত আরিয়ান খান বাংলার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ভারতীয় জনগণের সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আমাদের সাধারণ মানুষের মত তাঁরাও দিল্লীর ক্ষমতাসীনদের শাসন, ত্রাসন ও সংহারে বিপর্যস্ত। ১৯৭১ সালে পূর্ববঙ্গ স্বাধীন হলেও আমাদের হাত পাগুলো এখনো বিচ্ছিন্ন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা দিল্লীর শাসকদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করছি। এই আধুনিক যুগে এসে আমরা কোন রক্তপাত চাই না। আমরা বিনা রক্তপাতে দখলে রাখা বাংলার অংশগুলো দিল্লীর শাসকদের ফিরিয়ে দেয়ার অনুরোধ করছি। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিট্রিশ সরকার যেমন গণভোটের আয়োজন করেছিলো। আমরাও দিল্লীর কাছে সেরকম গণভোট আয়োজন করার দাবী করছি। আমাদের বিশ্বাস গণভোট হলে বাঙালি জাতির পশ্চিমাংশও দিল্লীর শাসকদের তথাকথিত ভারত সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীন হবেন এবং পুরো বাঙালি জাতি আবার অবিভক্ত বাংলার বাসিন্দা হবেন। বাংলাদেশিত্ব/বাঙালিত্ব’ আইডেন্টিটি আমাদের জন্মগত অধিকার। আমরা তা অর্জন করবই। পলাশী দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। বাঙালিকে জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা প্রদানকারী ও সর্বপ্রথম শাহ-ই-বাঙ্গালাহ উপাধি ধারণকারী শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমরা গর্বিত, আমরা বাঙালি। জয় বাংলা।

এসময় তিনি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জনগণকে অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন বা দ্যা ইউনাইটেড বেঙ্গল মুভমেন্টে যোগ দেওয়ার আহবান জানান।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments