ধর্মপাশা( সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে ছাত্রলীগের চারজন কর্মীকে মারধর,কার্যালয়ের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র ও মুঠোফোন ভাঙচুর এবং সুনামগঞ্জ-১আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকারের নৌকা প্রতীকের ব্যানার ছিড়ে ফেলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ -১আসনের বর্তমান মনোনয়ন বঞ্চিত সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তাঁর লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১আসনে নির্বাচনী অনুসন্ধ্যান কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, ধর্মপাশা থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেটলী প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনের পক্ষে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা চলাকালে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সুনামগঞ্জ-১আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকারের নৌকা প্রতীকের পক্ষে সাউন্ডবক্স দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মী মো আশরাফুল (১৫),মো.আলী হোসেন(১৫), রাকিবুল ইসলাম (১৮),রুমান মিয়া (১৫),রয়েল মিয়া (১৫),আল শাহাবীর (১৫) ও বাশারুল ইসলাম (১৫) এই সাতজন ছাত্রলীগের কর্মী নৌকা প্রতীকের ভোট প্রদানের গান বাজাচ্ছিল।
সভা শেষে সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ২০/২৫ জন লোক নিয়ে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। এ সময় তিনি ধর ধর বলে ছুদির পুতাইনরে ধর বলে চিৎকার মেরে বলতে থাকেন, আমি আওয়ামী লীগের বাপ, আমারে তোরা ছিনসনা,এখনো আমি এমপি আছি, ক্ষমতায় আছি বলেই সংসদ সদস্য সেখানে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল ও রোমানের পরিহিত পোশাকের কলার চেপে ধরে দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা মারেন।
তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকারের নৌকা প্রতীকের ব্যানারটি টান দিয়ে ছিড়ে ফেলেন এবং সাউন্ডবক্স বাজানোর জন্য ব্যবহৃত মুঠোফোনটি ছুড়ে ফেলে দেন। পরে তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজন দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী রয়েল ও আলী হোসেনকে চর ও লাথি মারেন।এ সময় অপর তিনজন ছাত্রলীগ কর্মী দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।সংসদ সদস্যের সঙ্গে থাকা লোকজন এক পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে থাকা সাউন্ডবক্স,চেয়ার-ও টেবিল ভাঙচুর করেন।
ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল,রোমান,রয়েল ও আলী হোসেন বলে, সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনে রতনের সভা চলাকালে আমরা নৌকার প্রচারণার সাউন্ডবক্সে কোনো গান বাজাইনি। সভা শেষে বাজিয়েছি। তিনি নিজে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকারের ব্যানারটি ছিড়ে ফেলেছেন। গানবাজানোর জন্য ব্যবহৃত এনড্রয়েড মোবাইলটি ছুড়ে ফেলে দেন। এমপি রতন ও তাঁর লোকজন আমাদেরকে চর লাথি মারাসহ পরিহিত জামার কলার চেপে ধরেছেন। দেশের দায়িত্বশীল এমন পদে থেকে তিনি যে অশালীন ভাষায় কথা বলেছেন। তাঁর এহেন কার্যক্রম আমরা কখনো আশা করিনি। এ ঘটনায় আমরা দৃষটান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনার উপজেলা কমিটির সদস্য শামীম আহমেদ মুরাদ বলেন, সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নৌকা প্রতীক না পেয়ে আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে তিনি পাগলামি শুরু করে দিয়েছেন। জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে আমাদের নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের মারধর,ভয়ভীতি দেখানো,নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ব্যানার ছিড়ে ফেলা,আসবাবপত্র , সাউন্ডবক্স ও মোবাইল ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সুনামগঞ্জ -১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধ্যান কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি।
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)মো. শামসুদ্দোহা বলেন,খবর পেয়ে রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। আমরা স্থানীয় লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনকে একাদিক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাপেইজ/এএসএম