সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া সংলগ্ন বাংলাদেশীদের করা চোরাই কয়লা গুহায়(কোয়ারী) দখককে কেন্দ্রকে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দু’পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়। এবং গুরুতর আহত অবস্থায় জজ মিয়া (৪০) নামের একজন সিলেট উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রাত ১১ টার সময় মারা যায়।
নিহত জজ মিয়া উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লালঘাট গ্রামের কিতাব আলীর ছেলে।
জজ মিয়ার মারা যাওয়ার খবর পেয়ে রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের মোঃ আছমত আলীর ছেলে আব্দুল মজিদ (৫০) ও একেই গ্রামের আলকাছ মিয়ার ছেলে ফখর উদ্দিন (৩০) ও ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার বাসিন্দা আবু বক্করের ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৮) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত রবিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১১ টার সময় উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে চারাগাও বালুর চড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতের পরিবার, স্থানীয় এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, গত (৭ এপ্রিল) রবিবার সকালে উপজেলার চারাগাওঁ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে ভারতীয় সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া সংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশীর করা অবৈধ চোরাই কয়লা গুহা (কোয়ারী) থেকে চুরি করে কয়লা আনতে অবৈধ পথে ভারতীয় সীমান্তে থাকা চোরাই কয়লার গুহায় (কোয়ারীতে) যায় লালঘাট গ্রামের আলকাছ মিয়ার ছেলে মুসা মিয় (২২) বাচ্ছু মিয়া (৪৫) ও শরিফুল ইসলাম (২৮)সহ ১০/১২ জনের একটি চোরাই কয়লা শ্রমিকের দল। এ সময় চোয়াই কয়লার গুহা দখল নিয়ে আলকাছ উদ্দিনের ছেলে মুসা মিয়া ও বাচ্ছু মিয়ার ছেলে রাজা মিয়ার কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঝগড়া বাঁধে।
পরে মুসা মিয়া ও বাচ্ছু মিয়াসহ সবাই ভারতীয় সীমান্তে করা চোরাই কয়লা গুহা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ চারাগাওঁ এলাকার বালুচড় নামক স্থানে আসে। এ সময় তাদের আত্নীয় জজ মিয়া কেন এবং কি কারণে কয়লায় (কোয়ারীতে) মুসা মিয়া ও রাজা মিয়ার মধ্যে ঝগড়া হয় জানতে চায়। এতে বাচ্ছু মিয়া ও জজ মিয়ার মধ্যে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেঁ। এ সময় বাচ্ছু মিয়া ও তার সাথে থাকা বাবুল মিয়া (৩৫),খুরশেদ মিয়া (৩৪), সুরাত মিয়া (৫০)সহ ৮/১০ জনের একটি দল দেশীও অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে জজ মিয়ার উপর হামলা চালিয়ে গুরুত্বর আহত করে। এ খবর পেয়ে জজ মিয়ার আত্নীয় স্বজন ঘটনাস্থলে আসলে আবারও বাচ্ছু মিয়া ও জজ মিয়ার লোকজনে দেশীয় অস্ত্রসজ্জিত হয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে অনন্ত ২০জন আহত হয়। পরে এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে দুপুরে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে গুরুতর আহত জজ মিয়ার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় এইদিন বিকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় জজ মিয়াকে। গুরুতর আহত রাবেয়া বেগম (২৫)কে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং বাচ্চু মিয়া (৪৫) শরিফুল ইসলাম (৩৫)কে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। আর অন্য আহতদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গুরুত্বর আহত জজ মিয়া রবিবার রাতে ১১টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নিহতের আত্নীয় বাচ্ছু মিয়া।
অপরদিকে আজ (৮ এপ্রিল) সোমবার ভোররাতে উপজেলার চাঁনপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতের কালা পাহাড় এলাকায় থাকা চোরাই কয়লা গুহা থেকে চুরি করে কয়লার বস্তা নিয়ে আসার সময় গুহার পাথর চাপায়া বাবুল মিয়া(৪২) নামের অপর যুবকের মৃত্যু হয়।
নিহত যুবক বাবুল মিয়া উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে মৃত কালা মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানান, নিহত বাবুল মিয়াসহ ১০/১২ জনের একটি চোরাই কয়লা শ্রমিকের গ্রুপ আজ ভোররাতে চাঁদপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতের কালা পাহাড় এলাকায় যায় কয়লা আনতে। এ সময় চোরাই কয়লার গুহা ভিতর থেকে কয়লা বস্তা নিয়ে বেড়িয়ে আসায় সময় হঠাৎ একটি বড় পাথরের খন্ড ধঁসে পাড়ে বাবুলের উপর। পাথর চাপায়া ঘটনাস্থলেই কয়লা শ্রমিক বাবুল মারা যায়। পরে অন্য শ্রমিকরা নিহত বাবুলের বাড়িতে খবর দিলে স্থানীয়রা কয়লার গুহার ভিতর থেকে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে সকালে থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন জন্য সুনামগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে।
এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বলেন, ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। এবং অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এবং গুহার পাথর চাপায়া নিহত যুবকের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।