ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলায় অটোরিকশা ছিনতাইকালে পৃথক ঘটনায় দুই অটোরিকশা ড্রাইভার হত্যাকাণ্ডের সাত আসামি গ্রেপ্তারসহ ছিনতাই হওয়া দুটি অটোরিকশা উদ্ধার করেছে ধর্মপাশা থানা পুলিশ।
মামলা দুটির বিবরণে জানা যায়, গত ১৫ এপ্রিল ধর্মপাশা থানাধীন ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামের পাশে বিল্লাল নুরীর ধান ক্ষেত হতে একটি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ধর্মপাশা থানা পুলিশ। লাশটি ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিন নোয়াগাঁও গ্রামের মোঃ কারি মিয়া খানের ছেলে নিখোঁজ অটোচালক সাইকুল ইসলাম খান (২৭) এর বলে শনাক্ত করেন নিহতের পিতামাতা। এ বিষয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ২০ এপ্রিল ধর্মপাশা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়। ৮ এপ্রিল বিকালে সাইকুল ইসলাম খান অটোরিকশাসহ নিখোঁজ হয়।
উক্ত মামলা তদন্ত চলাকালীন গত ২৫ এপ্রিল ধর্মপাশা উপজেলার ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের নিমাইকোনা হাওড়ের সাহাব উদ্দিনের ধান ক্ষেত হতে একটি মানব দেহের মাথার খুলি এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়ের সাথে থাকা ময়লাযুক্ত কাপড় উদ্ধার করা হয়। এ লাশটি ধর্মপাশা উপজেলার দশধরী গ্রামের মোঃ কামাল মিয়ার ছেলে নিখোঁজ অটোচালক হুমায়ুন কবির (২০) এর বলে শনাক্ত হয়। এ বিষয়েও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ২৯ এপ্রিল ধর্মপাশা থানায় আরেকটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।
২টি মামলার ঘটনায় প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাইসহ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে ধর্মপাশা থানা পুলিশের একাধিক টিম ধর্মপাশা থানাসহ নেত্রকোনা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ১ লা মে হতে ৩ মে পর্যন্ত ব্যাপক অভিযান চালিয়ে সন্ধিগ্ধ আসামিদের শনাক্ত করাসহ ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করে এবং চোরাইকৃত নিহত সাইকুল ইসলামের সচল অটোরিকশাটি ও হুমায়ুনের অটোরিকশার ৪ টি ব্যাটারী উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুধবহর গ্রামের মোঃ রতন মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন দিলু (৩০), রফিকুল ইসলামের ছেলে আজিম উদ্দিন (২৫), মোঃ রফিকের ছেলে নুরুল আমীন (২২), মোঃ ময়না মিয়ার ছেলে রুবেল (২২), মোঃ আবুল কাসেমের ছেলে জাকিরুল ইসলাম ইমুল (২৪), একই ইউনিয়নের দক্ষিণ নোয়াগাঁওয়ের মোঃ স্বপন মিয়ার ছেলে কাউছার নিয়াশ (২৫) এবং নেত্রকোনা সদর থানার ঠাকুরকোনা গ্রামের মৃত গোলম রব্বানীর ছেলে সেলিম মিয়া (৩৫)।
আসামি রুবেলকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ২টি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং সে সহ আসামি দেলোয়ার হোসেন দিলু, আজিম উদ্দিন, নুরুল আমীন, জাকিরুল ইসলাম ইমুল, কাউছার নিয়াশা মিলে হত্যা করে বলে জানায়।
দুটি হত্যাকাণ্ড উক্ত আসামিরা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। রুবেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা মডেল থানাধীন গোয়ারা গ্রাম থেকে সন্দিগ্ধ আসামি জাকিরুল ইসলাম ইমুল, আসমি কাউছার নিয়াশা, আসমি আজিম উদ্দিন এ তিন আসামিকে আটক করা হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সকলেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। ছিনতাইকৃত অটোরিকশা দুটি নেত্রকোনা জেলার ঠাকুরকোনা এলাকার সেলিম মিয়ার নিকট নিহত অটোরিকশা চালক হুমায়ন কবিরের অটোরিকশাটি ৩০ হাজার টাকায় এবং নিহত অটোরিক্সা চালক সাইকুল ইসলাম খানের অটোরিক্সাটি ৩৭ হাজার টাকায় বিক্রয় করে।
তথ্য মোতাবেক আটককৃত আসমিদেরসহ নেত্রকোনা জেলার নেত্রকোনা সদর থানাধীন ঠাকুরকোনা এলাকার বাজার হইতে আসমি সেলিম মিয়াকে আটক করিয়া জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, আসমি রুবেল ও আসমি জাকিরুল ইসলাম ইমুল চোরাইকৃত অটোরিকশা ২টি আসমি সেলিম মিয়ার নিকট ৬৭ হাজার টাকায় বিক্রয় করে। উক্ত অটোরিক্সা ২টি সেলিম এর দেখানো ও আসমিদের সনাক্ত মতে উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে গ্যারেজ হইতে উদ্ধার করি। অতপর আটকৃকত আসমিদের দেওয়া তথ্য মতে জানা যায় যে, আসমি দেলোয়ার হোসেন দিলু নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন মেসার্স শুভ শান্তি নামক প্রেট্রোল পাম্পে কাজ করে। উক্ত তথ্য মোতাবেক প্রেট্রোল পাম্পে হইতে আসমি দেলোয়ার হোসেন দিলুকে আটক করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। পরবর্তীতে ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত দুধবহর গ্রামের নুরুল আমীনকে তাহার নিজ বসতবাড়ি হইতে আটক করা হয়। উল্লিখিত আটকৃত সকল আসমিগণ সহ চোরাই উদ্ধারকৃত মৃত সাইকুল ইসলাম এর ১টি সচল অটোরিকশা ও অপর মৃত হুমায়ন কবির এর অটোরিকশার মোট ৪টি ব্যাটারী উদ্ধার করা হয়।
আটককৃত আসমিদের পর্যায়ক্রমে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তাহারা জানায় যে, গত রমজান মাসের ৪/৫ রোজার দিন তারিখ ১৬ মার্চ ইফাতারী শেষে দুধবহর গ্রামের আসামিদের বসত বাড়ীর পার্শ্বে কংস নদীর পাড়ে শিমুলতলা (শিমতলা)’তে আসমি দেলোয়ার হোসেন দিলু এর নেতৃত্বে আসমি রুবেল, নুরুল আমিন, জাকিরুল ইসলাম ইমুল, কাউছার নিয়াশা, আজিম উদ্দিন মিলে অটোরিকশা চুরি করিবে মর্মে পরিকল্পনা করে। সে সময় প্রথমে সাইকুল ইসলাম খান এর অটোরিকশা চুরি করিবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু সাইকুল সকল আসমির পরিচিত হওয়ায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। তখন দ্বিতীয় পরিকল্পনা মোতাবেক ঐ রাতেই দেলোয়ার হোসেন দিলুর কাছে থাকা দশধরী গ্রামের অটোরিকশা চালক হুমায়ুন কবিরের মোবাইল নম্বর আসামি রুবেলকে দেয় এবং বলে যে, আগামীকাল যোগাযোগ করে বলবি যে, পরেরদিন সকলেই বেড়াইতে যাইবে বলিয়া পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক ঘটনার দিন ১৭এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক রুবেল অটোরিকশা চালক হুমায়ন কবিরকে ফোন দিলে সে অটোরিকশা নিয়া নোয়াগাঁও গ্রামের রাস্তায় আসিলে সকল আসমিগণ অটোরিকশায় উঠিয়া কান্দাপাড়া গ্রামের নিমাইকোনা হাওড়ের রাস্তায় অটোরিকশা রাখিয়া হুমায়ন কবিরকে সকল আসমিগণ ধরিয়া নিমাইকোনা হাড়রের ধান ক্ষেতে নিয়া আসামি দেলোয়ার হোসেন দিলু তাহার সঙ্গে থাকা গামছা দিয়া হুমায়ন কবিরের গলায় পেচ দিয়া জমিতে ফেলিয়া শ্বাসরোধ করে। হুমায়ন কবির ছটফট করিতে থাকিলে সকল আসমিগণ হুমায়ুনের হাত, পা চেপে ধরিয়া আসমি আজিম উদ্দিন মুখের মধ্যে গামছা ঢুকাইয়া দেয় এবং চেপে ধরে।