নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শহর ও পৌরসভাগুলোয় ব্যবসা সহজীকরণ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) তাদের “বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম (বিআইসিআইপি)” – এর অধীনে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মিউনিসিপ্যালিটি কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স (এমসিআই) সম্পর্কিত ৫টি স্তম্ভের উপর ৩ দিন ব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করে। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সুইসকান্টাক্ট কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘প্রবৃদ্ধি’ প্রকল্পের সহায়তায় এই কর্মশালাটি ১২-১৪ মে, ২০২৪ নরসিংদীর হেরিটেজ রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয়।
আবাসিক এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল ৭৬ টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে বিআইসিআইপি-এর অধীনে প্রতিটি স্তম্ভের সংস্কার এজেন্ডা এবং মিউনিসিপ্যালিটি কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স (এমসিআই) বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা।
এমসিআই হচ্ছে এমন একটি ইনডেক্স যা বাংলাদেশের পৌরসভাগুলোতে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মূল্যায়ন এবং ব্যবসা পরিচালনার সহজতা পরিমাপ করার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি, ব্যবসায়িক অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে, সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোতে নতুন বিনিয়োগ সম্ভাবনা উন্মোচনের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিআইসিআই প্রোগ্রামের ৫ টি স্তম্ভ সাথে এমসিআই-এর প্রাসঙ্গিকতার উপর জোর দিয়ে, এই কর্মশালায় ব্যবসার পরিবেশ, অবকাঠামো, কর, বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তি, ডিজিটাইজেশন এবং অর্থের সহজলভ্যতার মতো ক্ষেত্রে সংস্কার এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কর্মশালাটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সিটি কর্পোরেশন এবং পৌর পর্যায়ে ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত বাঁধাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো মোকাবেলার উপর জোর দেয়।
বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানগত উন্নতি অর্জনের লক্ষ্যে প্রণীত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্যে বিডা বিভিন্ন মন্ত্রনালয়/বিভাগ/সংস্থার সাথে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস প্রোগ্রাম স্থগিত হওয়ার পর, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ন্যাশনাল কমিটি ফর মনিটরিং ইমপ্লিমেন্টেশন অফ ডুয়িং বিজনেস রিফর্মস (এনসিএমআইডি), সারা দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে এবং বিনিয়োগ বাড়াতে বিআইসিআই প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করেছে।
বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ডের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প ‘প্রবৃদ্ধি’ স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে সহযোগিতা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিডা-কে বিআইসিআই প্রোগ্রাম-এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং উক্ত প্রোগ্রামে মিউনিসিপ্যালিটি কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স (এমসিআই) অন্তর্ভুক্ত করতে সহায়তা করছে।
এই কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিডা’র নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) জনাব ডঃ খন্দকার আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিআইসিআইপি-এর মূল লক্ষ্য হল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী করা। দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, অর্থনীতি আরও সম্বৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাশে থাকার জন্য আমি সুইজারল্যান্ড সরকার ও প্রবৃদ্ধি প্রকল্পকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
কর্মশালার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) মোঃ লোকমান হোসেন মিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিকেন্দ্রীকরণে ইতিমধ্যেই নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে। এর ফলে, শহর কেন্দ্রিক বিনিয়োগের সাথে সাথে পৌরসভা পর্যায়েও দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ ও আস্থা অর্জনে বিডা কাজ করে চলছে। এর ধারাবাহিকতায়, ‘প্রবৃদ্ধি’ স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে সহযোগিতা ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে বিডা-কে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম-এর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করছে।
বিআইসিআইপি-তে এমসিআই অন্তর্ভুক্ত করার ফলে এই প্রোগ্রামের বাস্তবায়নে আরও ত্বরান্বিত হবে এবং সেই সাথে নতুন নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মো: কামাল হোসেন, যুগ্মসচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে একটি স্মার্ট অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে হলে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামের মত বড় শহরের পাশাপাশি পৌরসভা পর্যায়েও এ ধরনের কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স ব্যবহার করা অত্যন্ত অপরিহার্য। প্রবৃদ্ধির এই সহায়তার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী সব পৌরসভার ব্যবসার পরিবেশের তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত ও বেগবান হবে”।
বিডা’র মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায় বলেন, তিন দিনের এই কর্মশালায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আগত অংশগ্রহণকারীদের সাথে দেশের ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরাসরি বিভিন্ন সংস্কার বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়। যার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এমসিআই-এর মেথডোলজি ডিজাইনার ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ -এর আওতায় আগে শুধুমাত্র বাংলাদেশের বড় দুইটি শহরে এ ধরণের ইনডেক্স ব্যবহার করা হত। প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের সহায়তায়, এখন স্থানীয় পর্যায়ে আমরা এই ইনডেক্স ব্যবহার করতে পারবো। যার ফলে পুরো দেশের ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে একটি পূর্ণ ধারণা পাওয়া যাবে”।
তিন দিন ব্যাপি এই কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মুজিবুল হাসান সেজান। তিনি বলেন, এমসিআই প্রণয়নের শুরুর পর্যায়ে আমরা প্রবৃদ্ধির সহায়তায় এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত সাতটি পৌরসভায় এমসিআই বাস্তবায়ন করবো। এবং পরবর্তী পর্যায়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের সকল পৌরসভায় ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বাড়াতে ও দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে আমরা ক্রমান্বয়ে এমসিআই বাস্তবায়ন করবো বলে আশা করছি।
তিনি এমসিআই চলামান রাখার ক্ষেত্রে বিডা’র ভূমিকার উপরও দেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য সুইজারল্যান্ড সরকার এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনকে (এসডিসি) ধন্যবাদ জানান।
কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে বিডা’র নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মোহসিনা ইয়াসমিন দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ, ব্যবসার পরিবেশ উন্নীতকরণ ও সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য এই কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে তাদের নিজস্ব ভূমিকা পালনে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
বাংলাপেইজ/এএসএম