সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নিরিহ এক সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের বসতবাড়ির সামনে থাকা ৭ টি ফলন্তকাঠাঁলের গাছ জোরপূর্বক কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে পলাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেলের বিরুদ্ধে।
এ সময় ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু ওই হিন্দু পরিবারের লোকজন গাছ কাটায় বাধাঁ দিলে চেয়ারম্যান ও তার লাঠিয়াল বাহিনী পলাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি রাজেন্দ্র কুমা দাস(৫০) ও তার সহোদর সঞ্জয় কুমার দাস(৪০) কে তাদেরকে মারপিট করে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে আহত রাজেন্দ্র কুমার দাসকে রাতেই বিশ্বম্ভরপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। সঞ্জয় কুমার দাস প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ৩ জুন রোববার বিশ্বম্ভরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন আহত রামেন্দ্র কুমার দাস। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১ জুন শনিবার বিকাল ৩ টার সময় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পলাশ ইউনিয়নের মাঝাইর গ্রামে। আহত রাজেন্দ্র কুমার দাস বলেন, পলাশ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোহেল বিগত ৮/১০ বছর পূর্বে পলাশ বাজারে তাদের প্রায় ৪০ কোটি টাকার জমি জোরপূর্বক তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে। পরে নিরুপায় হয়ে রাজেন্দ্র কুমার দাস আদালতে একটি মামলা করলে এ নিয়ে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে শত্রুতা বাধেঁ।
এরই জের ধরে চেয়ারম্যান সোহেল মাঝাইর গ্রামের ভিতরে যাওয়ার জনসাধারণের যাতায়াতের রাস্তার পশ্চিম পাশে চেয়ারম্যান সোহেলের বাড়ি পূর্ব পাশে আমার বাড়ি। ওই রাস্তার পানি নিষ্কাশনের অজুহাতে ইউনিয়ন পরিষদের টাকায় নিজ প্রয়োজনে ড্রেন করতে চাচ্ছেন চেয়ারম্যান। কিন্তু সড়কের পশ্চিম পাশে সড়কের জায়গা দখল করে চেয়ারম্যান তার বাড়ির বার্থ রুমের টাংকি দেয়ার কারণে কোন জায়গা না থাকায় পূর্ব পাশ দিয়ে ড্রেন করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন।
যে জায়গা দিয়ে ড্রেন যাবে ওই জায়গার পাশে রাজেন্দ্র কুমার দাসের পৈত্রিক জায়গা রয়েছে। ওই ড্রেজ করার অজুহাত দেখিয়ে গত ১ জুন শনিবার সকালে আমার বাড়ির সামনে থাকা বাবার লাগানো তাদের লাগানো ৭ টি ফলন্ত কাঁঠালের গাছ তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে নিজেই কাটতে শুরু করেন। চেয়ারম্যান প্রভাবশালী হওয়ায় সরাসরি গাছ কাটায় বাধাঁ না দিয়ে রাজেন্দ্র কুমার সশরীরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস গিয়ে ইউএনও’কে জানান।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জায়গাটি তাদের পৈত্রিক দাবি করে তিনি বলেন, মাপজোকে সরকারি জায়গা হলে বাধা দেবেন না। আমরা নিজেরাই গাছ কেটে দেবো।
রামেন্দ্র কুমার দাস আরও জানান, পরে তাৎক্ষণিক ইউএনও সাহেব পরে চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে গাছ কাটা বন্ধ রাখার জন্য বলেন। চেয়ারম্যান গাছ কাটা বন্ধ রাখেন নি। এসময় ইউএনও’র কক্ষে বিশ্বম্ভরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণও ছিলেন। ইউএনও সাহেব পরে সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) শিল্পী রানী মোদককে ঘটনাস্থলে পাঠান। এসিল্যান্ড ওখানে পৌঁছার আগেই চেয়ারম্যানের লোকজন ৭ টি গাছ কাটে ফেলে। এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পরে এ নিয়ে দুপক্ষের কথা কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে এসিল্যান্ড এর সামনেই চেয়ারম্যানের হাতে থাকা দা(বটি) দিয়ে রামেন্দ্র কুমার দাসের মাথায় আঘাত করে। এবং চেয়ারম্যানের লোকজন ও তার ভাইকে সঞ্জয় কুমার দাসকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ সময় ঘটনা বেগতিক দেখে এসিল্যান্ড রানী মোদক ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বিশ্বম্ভরপুর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
রাজেন্দ্র কুমার দাসের মথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বর্তমানে তিনি বিশ্বম্ভরপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এবং তার ভাই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চেয়ারম্যান ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে এখন আমি ও আমার পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও এনিয়ে বাড়াবাড়ি করলে প্রাণে মারর হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে বর্তমানের আমি ও আমার পরিবারের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
মাঝাইর গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী মনমহন দাস(৭০) জানান, তাদের সাথে চেয়ারম্যান পূর্ব বিরোধ থাকায় আজকে অনেকটাই জোরপূর্বক সকাল থেকে তাদের গাছ কাটে চেয়ারম্যান। অবশেষে ইউএনও আর এসিল্যান্ড এর দারস্থ হয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার পরেও এসিল্যান্ড এর সামনেই ওই নিরীহ পরিবারের দুজনকে চেয়ারম্যান ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর দা- বাশঁ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর করে। অথচ সড়কের উপরে ঝড়ে সময় বড়বড় গাছ পড়ে আছে সরানোর জন্য আমরা চেয়ারম্যানকে বলেছিলেন, জীবন্ত গাছ কাটার জন্য বলেন নি।
বিশ্বম্ভরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, রামেন্দ্র কুমার দাস এসে চেয়ারম্যান যে গাছ গুলো কাটছে জমিটি তাদের পৈত্রিক। গাছ গুলো তার বাবার লাগানো। এবং দয়া করে মাপজোগ করিয়ে যেন গাছ কাটতে ইউএনওকে বলেন। পরে ইউএনও ঘটনাস্থলে এসিল্যান্ডকে পাঠান। এর আগে ফোনে গাছ কাটা বন্ধ রাখার জন্যও চেয়ারম্যানকে ফোনে জানিয়ে দেন ইউএনও।
ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহমদ বললেন, এর আগে রাস্তার পানি নিস্কাশনের ড্রেনের জন্য গ্রামের সকলে নিয়ে বাসে রেজুলেশনে করে সামাজিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং ইউএনও সাহেবের অনুমতি নিয়ে গাছ কেটেছি। রাস্তার পাশে থাকা কোন গাছ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এভাবে কাটা যায় না, কাউকেও কাটার অনুমতিও দেওয়া যায় না। অনুমতি নিয়েই কাটেছি বলেন চেয়ারম্যান সোহেল , আপনি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেন। আর হিন্দু পরিবারের লোকজনকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, আমি কাউকে মারি নি। আমাকে মারার জন্য তারা লাঠি টানাটানি করছিল। এ সময় তাদের লাঠির তার ভাইয়ের লাঠির আঘাত রানুর(রাজেন্দ্র কুমার দাস ) মাথায় গিয়ে পড়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিল্পী রানী মোদক বললেন, আমি ঘটনাস্থলে যাবার পর কোন গাছ কাটা হয় নি। তিনি জানান, গাছ কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রামেন্দ্র বাবুর ভাই চেয়ারম্যানকে ধাক্কা দেন। পরে চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে মারধর করে। আর আমরা বাধা দেবার আগেই চেয়ারম্যান ও লোকজন কিছু গাছ কাটে ফেলে।
বাংলাপেইজ/এএসএম