নিজস্ব প্রতিবেদক: একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে আলোচিত সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের৷ অবৈধ সম্পদসহ এবার ভুয়া পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করার তথ্য বের হয়ে এসেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হারুনের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে এলাকার মানুষ।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কুরবান আলী বলেন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের বাবা আব্দুল হাসেম ছিলেন ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’। এমনকি হারুনের বাবার চাচা ছিলেন কুখ্যাত রাজাকার।
তিনি আরও বলেন, ‘হারুনের বাবা আব্দুল হাসেমের নাম যখন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তখন ইউনিয়ন কমান্ডার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক। উনার মাধ্যমে কীভাবে হইছে এটা উনি বলতে পারবেন। হারুনের বাবা আব্দুল হাসেম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। ২০১০ সালে মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কমান্ডার ছিলেন রফিকুল আলম রতন।
তখন আমি ডেপুটি কমান্ডার। আমরা তখন হারুনের বাবার বিষয়ে জোরালো প্রতিবাদ ও লিখিত আকারেও জানিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আব্দুল হাসেম কীভাবে, কী করে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন, তা আমরা বলতে পারি না। ঘাগড়া ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় হারুনের বাবাসহ বর্তমানে ২৫ জনের নাম রয়েছে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা কুরবান আলী আরও বলেন, ‘হারুন অর রশীদের বাবার চাচা ইদ্রিস ওরফে ঈদু মোল্লা কিশোরগঞ্জের রাজাকার বাহিনীর নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে এসে আমরাই উনাকে গুলি করে মেরেছি।’
‘মুক্তিযুদ্ধের ১৫-২০ বছর পরেও দেখেছি হারুনের বাবা আব্দুল হাসেমের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। এত সহায়-সম্পদ ছিল না। এটা আরও ভালো বলতে পারবে তাদের গ্রাম হোসেনপুরের মানুষ। হাওরে যে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট (৩০ একর জমির ওপর) করেছে সেখানেও মানুষের জমি দখল করেছে, এটাও বাস্তব’, যোগ করেন কুরবান আলী।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল হাসেম ও মা জহুরা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স ও জাবি থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন হারুন।
ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘হারুন অর রশীদের এক ভাই চিকিৎসক, এক ভাই সাব ইন্সপেক্টর এবং আরেক ভাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে চাকরি করেন। সরকারি চাকরি করে এত বড় রিসোর্ট করা সম্ভব না। সরকারি চাকরির টাকা দিয়ে ফ্যামিলি চালানোই তো কঠিন।’
হারুন অর রশীদ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে পুলিশে চাকরি পান। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার এসে তার পদায়ন আটকে দেয়। পরে ওয়ান-ইলেভেনের সময় হারুনের চাকরি স্থায়ী হয়। ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ২০১৬ সালে ভূষিত হন বিপিএম পদকে। এর আগে দুবার পিপিএম পদক লাভ করেন তিনি।
২০২২ সালের ১১ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস সই করা এক প্রজ্ঞাপনে হারুন অর রশীদকে ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
একই বছরের ১২ জুন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবিপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয় তাকে। এরআগে হারুন অর রশীদ তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হিসেবে কাজ করেন।
বাংলাপেইজ/এএসএম