দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা এবং করোনা মহামারি থেকে মানবজাতির মুক্তিতে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামাত শেষে মোনাজাতে রাষ্ট্রবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র নস্যাতের প্রার্থনা করা হয়।
আগের দুই বছর করোনা মহামারির কারণে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ঈদের জামাতে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি অংশ নেন।
মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে আটটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন। ঈদ জামাতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ অংশ নেন।
মোনাজাতে মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন বলেন, হে আল্লাহ তুমি জানো কোন অপশক্তি বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করার পরিকল্পনা করছে। তুমি তাদের এ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দাও। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার তওফিক দান করো।
তিনি বলেন, এ দেশ শান্তি সম্প্রীতির দেশ। এদেশে সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করে। শান্তি-সম্প্রীতি নষ্ট হয়, আমরা এমন উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিহার করবো। এধরনের বক্তব্য দেবো না।
মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন আরও বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে এদেশ পেয়েছি আমরা, আল্লাহ। এদেশকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন। পৃথিবী থেকে যুদ্ধ যাতে চলে যায়। সকল বালা-মুসিবত থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
দোয়া মোনাজাতে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনা এবং বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস দূর হওয়ায় শুকরিয়া আদায় করা হয়। এছাড়া মোনাজাতে সব উম্মতে মোহাম্মদির গুনাহ মাফ চাওয়া, সব মৃতব্যক্তির কবরের আজাব মাফ চাওয়া এবং যে কোনো বিপদ থেকে দেশকে হেফাজতের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা পরস্পর মোলাকাত বা কোলাকুলি করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
করোনার কারণে ২০২০ এবং ২০২১ সালে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার প্রধান জামাত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাতে অংশ নেন মুসল্লিরা। এবারের ঈদের জামাত স্বাভাবিক নিয়মেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণত জাতীয় ঈদগাহে দেশের প্রধান ঈদের জামাতে রাষ্ট্রপতি অংশ নেন। কিন্তু এবার বঙ্গভবনে অনুষ্ঠেয় ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গভবনের ঈদ জামাতে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও তার পরিবারের সদস্যরা এবং বঙ্গভবনে দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন কর্মকর্তা অংশ নেন বলে জানা গেছে।
তবে জাতীয় ঈদগাহে মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সকাল সাড়ে ছয়টার পর থেকে ঈদগাহ মাঠে উপস্থিত হতে থাকেন মুসল্লিরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে মুসল্লিদের ভিড় বাড়ে। সকাল আটটায় ঈদগাহ মাঠে রমজান এবং ঈদ জামাতের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা শুরু করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন।
সকাল সাড়ে আটটার আগেই ঈদগাহ মাঠ মুসল্লিদের পদচারণায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। পরে কদম ফোয়ারার সামনের রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ান হাজারো মুসল্লি। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরু থেকেই তৎপর ছিল। মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, শিক্ষা ভবনে ছিল বিশেষ নিরাপত্তা ফটক। এর ভেতর কেউ গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারেননি।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রধান জামায়াতের আয়োজন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, এবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের ভেতর একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে নারী মুসল্লিদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল।