লন্ডন অফিস: বাংলাদেশে ছাত্র হত্যা ও নৃশংসতা বন্ধে বৃটিশ পার্লামেন্টে আয়োজিত এক আলোচনায় বক্তারা জরুরি গ্লোবাল অ্যাকশনের আহবান জানিয়েছেন।
সোমবার (২৯ জুলাই) মিসেস রূপা হক এমপি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন এবং নৃশংসতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের গ্রান্ড কমিটি রুমে একটি আলোচনার আয়োজন করেছিলেন।
বক্তাদের মধ্যে ছিলেন- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে-এর পরিচালক সাচা দেশমুখ, লেস্টার সাউথের এমপি শওকত আদম এবং ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান, সোয়াস’র গবেষক এবং বিয়ন্ড দ্যা ব্যারিয়ার ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা এ কে এম জাকির হোসেন এবং গ্লোবাল বাংলাদেশি’স অ্যালায়েন্স অন হিউম্যান রাইটসের আহ্বায়ক ও সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক শামসুল আলম লিটন।
আলোচনায় অংশ নেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজ কর্মী তালেয়া রহমান, ডেভিড বার্গম্যান, আব্দুল মালিক, মেজর (অব) সৈয়দ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার আফজাল জামি ও ডা. সাদিয়া। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান এবং আল জাজিরার তদন্ত ইউনিটের সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।
বিশিষ্ট নাগরিক অধিকার কর্মী ও পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
এ কে এম জাকির হোসেন তার মূল বক্তব্যে বাংলাদেশের গুরুতর রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটের কথা তুলে ধরেন বলেন, ‘ছাত্র বিপ্লব ২০২৪ এর সরকারের সহিংস দমনের ফলে উদ্ভূত হয়েছিল, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার উত্তরসূরীদের অন্যায়ভাবে সমর্থনকারী সরকারি-খাতের চাকরির কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ছিল। ১৬ জুলাই থেকে, শিশুসহ ২৬৬ জন জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার আহত বা কারাগারে বন্দী হয়েছে। যা দেশব্যাপী অস্থিরতা এবং বিশ্বব্যাপী নিন্দার জন্ম দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের নৃশংস প্রতিক্রিয়া, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির সাথে মিলিত, তরুণদের ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা এবং গণতন্ত্রের জন্য তাদের লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
রুপা হক এমপি শতাধিক শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ৪ এবং ৬ বছর বয়সী সহ ৩২ শিশু- কিশোর এবং কয়েকশ’ ছাত্র ও জনতা ইতিমধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। তিনি এই বিষয়গুলি সংসদে উত্থাপন করার এবং ছাত্র ও নিরপরাধ মানুষকে বাঁচানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র দফতর এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে ডিরেক্টর সাচা দেশমুখ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পরিচালনা করতে বেআইনি এবং অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের সমালোচনা করেছেন। তিনি ‘শুট-অন-সাইট’ নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সরকারের নিন্দা করেন, যার ফলে বিক্ষোভকারীরা তাদের মানবাধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে মারা যায়।
শামসুল আলম লিটন ব্রিটিশ সরকারকে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের নতুন প্রজন্মের অনুভূতি বোঝার গুরুত্বের ওপর জোর দেন, যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অভাবে যুক্তরাজ্যের চরম সংকটের সময়ে দেশের পাশে না দাঁড়ালে তা কখনো ভুলবে না।
শোকত আদম এমপির বক্তৃতায় যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের জন্য কি কি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে তার উপর আলোকপাত করেন। তিনি নির্বিচার ছাত্র-ছাত্রী ও শিশুদের হত্যার পেছনের সত্য উদঘাটনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশে প্রচলিত দায়মুক্তির সংস্কৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং কীভাবে এই নৃশংসতার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশের চলমান অরাজক পরিস্থিতিতে তার হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, একজন নিরস্ত্র ছাত্র বিক্ষোভকারী আবু সাঈদ ইউনিফর্মধারী পুলিশ খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছিল। এই ঘটনাটি মূলধারা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে জানা যায়। তবে, সরকার সাধারণ ছাত্র জনগোষ্ঠীকে অভিযুক্ত করার জন্য একটি বানোয়াট গল্পসহ একটি সাধারণ ডায়েরি রেকর্ড করেছে।
বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মহলের বিবেচনার জন্য নিম্নলিখিত সুপারিশ করা হয়েছে – আইন বিশেষজ্ঞ/আইনজীবীসহ বৃটেন থেকে একটি সর্বদলীয় সংসদীয় ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলকে অবিলম্বে বাংলাদেশ প্রেরণ- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের মান সীমিতকরণ, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রশিক্ষণসহ নিরাপত্তা সহায়তা অবিলম্বে সম্পূর্ণ বন্ধ করা। এছাড়া বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে জাতিসংঘের পিস কিপিং ফোর্সের পরিচালকের কাছে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে চিঠি পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।
বাংলাপেইজ/এএসএম