জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলুর ছেলে দলের যুগ্ম মহাসচিব আশিক আহমেদকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তার সৎ মামা দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপিকে সাংগঠনিক শাস্তি হিসেবে দলের সকল পদ পদবি থেকে এক মাসের জন্য অব্যহতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি।
এমপি আদেলকে এক মাসের জন্য অব্যহতি সংক্রান্ত পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর সুপারিশে গত ২১ মে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি অনুমোদন দেন।
এর আগে শোকজের জবাবে এমপি আদেল দলের যুগ্ম মহাসচিব আশিককে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় এমপি আদেলকে এক মাসের জন্য সকল পদপদবি থেকে তাকে অব্যহতি দিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দলীয় চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ করেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। মহাসচিবের সেই সুপারিশ অনুমোদন দেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
এদিকে এক মাসের জন্য এমপি আদেলকে দল থেকে অব্যহতি দেওয়া হলেও বিষয়টি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করছে জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব, সিনিয়র নেতা ও দলের দপ্তর সম্পাদক কিংবা দপ্তরের দায়িত্বশীল নেতাসহ কেউ মুখ খুলছেন না। বরং বিষয়টি সবাই এড়িয়ে চলছেন।
সাধারণত কারও বিরুদ্ধে কখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে কিংবা দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ করার কারণে কাউকে দলের পদ-পদবি থেকে অব্যহতি দেওয়া হলে সেই চিঠি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কিংবা দলের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু এমপি আদেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি কড়াকড়িভাবে গোপন রাখা হয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো তো দূরে বিষয়টি কয়েকজন সিনিয়র নেতা ছাড়া দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও জানেন না। চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের ভাগিনা হওয়ার কারণেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়টি গোপন রাখা হচ্ছে বলেও জানান দলটির এক নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘এত বড় ঘটনা ঘটনার পরও প্রথমে চেয়ারম্যান কিছুই করেননি। পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বরং কো-চেয়ারম্যানদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিনিয়র নেতারা ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করলে পরবর্তীতে দলের চেয়ারম্যান তাকে শোকজ করার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, দলের সিনিয়র নেতাদের চাপাচাপিতে এক মাসের জন্য আদেলকে বহিস্কার করা হলেও বিষয়টি যাতে গোপন থাকে সেজন্য অব্যহতির নিউজ গণমাধ্যমে দেওয়া হয়নি। অপকর্ম করার কারণে আদেলের যে শাস্তি হয়েছে সেটা দেশের মানুষ তো জানলই না বরং দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও অন্ধকারে থাকলো।’
সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে গত ১৯ মে দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের বনানী অফিসে তারই উপস্থিতিতে পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলুর ছেলে দলের যুগ্ম মহাসচিব আশিক আহমেদকে রুমে ডেকে নিয়ে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করে তারই সৎ মামা দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি।
এ ঘটনায় পত্র পত্রিকায় নিউজ হওয়ার পর এক পর্যায়ে ভাগিনা আদেলকে শোকজ করার নির্দেশ দিন জিএম কাদের।
গত ২২ মে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর স্বাক্ষরে শোকজ চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, গত ১৯ মে বেলা ১.৩০ মিনিটে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দোতলায় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব আশিক আহমেদের সাথে আপনি যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন তা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী। এ কারণে আপনাকে কেন জাতীয় পার্টির সকল পদ পদবি থেকে অব্যহতি দেওয়া হবে না তা আগামী তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।