অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা ছিল না বলে দাবি করেছেন তার স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮)। তিনি দাবি করেন, সকালে দুজনের মধ্যে ঝগড়ার একপর্যায়ে তিনি শিমুকে থাপ্পড় দেন। এতে শিমু তার ওপর চড়াও হন। ক্ষিপ্ত হয়ে শিমুর গলা চেপে ধরলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন।
এদিকে শিমু খুনের পেছনে দাম্পত্য কলহের বিষয়টি সামনে এলেও স্বজনরা এখনও জানেন না কী নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব। এমনকি হত্যাকাণ্ডের সময় ছেলেমেয়েরা একই বাসায় থাকলেও তারা কিছু টের পায়নি। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার গ্রিন রোড এলাকায় নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন এ অভিনেত্রী।
শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, রোববার সকালে তাদের ১৭ বছরের মেয়ে ও ৫ বছরের ছেলে বাসাতেই ছিল। তবে তারা কেউ ঘটনা সম্পর্কে কিছু টের পায়নি। ওটা নোবেলদের নিজেদের বাড়ি। নিজেদের থাকার ফ্ল্যাটটা তারা বড় করেই বানিয়েছিল। ঘরগুলো দূরে থাকায় তারা কিছু শুনতে পায়নি। নোবেল ছেলেমেয়েদের বলেছিল— তার মা সকালে শুটিংয়ে বেরিয়েছে। ছেলেমেয়েরা সেই কথাই সবাইকে জানায়।
শিমু-নোবেল দম্পত্তির সন্তানদের মধ্যে বড় মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। আর ছোট ছেলের বয়স ৫ বছর। পুলিশ বলছে, শনিবার রাতে গ্রিন রোডের ফ্ল্যাটে ঝগড়ার একপর্যায়ে স্ত্রী শিমুকে ‘গলা টিপে ধরে হত্যা’র কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তার স্বামী খন্দকার সাখাওয়াত আলীম নোবেল। হত্যার পর তার বন্ধু এসএম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদের সহায়তা নিয়ে লাশ গুম করেছিলেন।
পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, শিমুকে হত্যার পর রোববার সকাল ৭টা-৮টার দিকে ফরহাদকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে এনে বাইরে থেকে দুটো বস্তা এনে শিমুর লাশ তাতে ভরে সেলাই করেন নোবেল। এর পর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান। প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে মোহাম্মদপুর, বসিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকায় যান।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান। রাতেই কলাবাগান মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শিমুর স্বামী নোবেল। সোমবার লাশ উদ্ধারের পর নোবেল ও ফরহাদকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
বুধবার শিমুর ভাই খোকন বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বের কথা জানতাম। শিমুকে নানাভাবে নির্যাতন করত নোবেল। কিন্তু কী নিয়ে দ্বন্দ্ব তা জানি না।